৯শ ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯ পৌরসভায় ভোট রবিবার।

৯শ ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯ পৌরসভায় ভোট রবিবার।
ডন প্রতিবেদন : রবিবার (২৮ নভেম্বর) চতুর্থ ধাপে দেশের ৯শ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও ৯টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এই ধাপের নির্বাচনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। এই শেষ সময়েও বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা থেকে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এই ধাপের নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসর) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী গতরাতে বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, ‘আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদেরসঙ্গে বৈঠক করেছি। সেই বৈঠকে নির্বাচনে সহিংসতা এড়ানোর লক্ষ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর মাঠ পর্যায় থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদেরসঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য তাঁদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনেক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’ শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা এই ধাপের নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না। ক্ষেত্রবিশেষে নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় যে কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছিলেন, তাঁদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, আমাদের অবস্থান আগের তুলনায় কঠোর। নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছেও এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, অনিয়মে যুক্ত হলে তাঁরাও রেহাই পাবেন না। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, এবারের ভোট গ্রহণের সময় সহিংসতা কমবে।’ এর আগে গত ২৪ নভেম্বরের বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো নির্বাচনি সহিংসতা রোধ করার জন্য। তবে একটাও সহিংস ঘটনা হবে না, মারামারি হবে না, এমন নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।’ আর বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। ভোটকেন্দ্রে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলেই অনেক প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা পুলিশকে না জানিয়েই কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যান। এতে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। নির্বাচন কমিশন এই ধাপে এক হাজার সাতটি ইউপির নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করে। এরমধ্যে বিভিন্ন কারণে সাতটির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এসব ইউপির মধ্যে ১শটিতে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। সবমিলে আগামীকাল চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে ৯শ ইউনিয়ন পরিষদে। এই ধাপে চট্টগ্রামের রাউজানের ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য- সবকটি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া একইভাবে রাঙ্গুনিয়ায় ছয়টি ইউপিও বিনা ভোটের চেয়ারম্যান পেয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য, তৃতীয় ধাপের এই এক হাজার ইউপিতে মোট ভোটার দুই কোটি এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৮ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৩০ এবং পুরুষ ভোটার ১ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৩ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ১৯ জন ভোটার রয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৪০৯ জন, সদস্য পদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ হাজার ১০৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৪ হাজার ৬৩২ জন। এরইমধ্যে প্রথম ধাপে ৩৬৯টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ করেছে ইসি। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৮টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ হয় গত ১১ নভেম্বর। ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের এক হাজার ইউপিতে ভোটের পর চতুর্থ ধাপে ৮৪৩টি ইউপির ভোট হবে আগামি ২৬ জানুয়ারি। পঞ্চম ধাপে আজ (শনিবার : ২৭ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। যার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। প্রসঙ্গত, দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এরমধ্যে এবার সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকিগুলোতে মামলা জটিলতার কারণে আটকে গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৯ বার ইউপির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে প্রথম এবং ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার যে ৯ পৌরসভায় ভোট : রবিবার যে ৯ পৌরসভায় নির্বাচন হবে, সেগুলো হলো : লক্ষ্মীপুর সদর, পাবনার বেড়া, নোয়াখালীর সেনবাগ, রংপুরের পীরগঞ্জ, পটুয়াখালীর গলাচিপা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নীলফামারী সদর পৌরসভা।