আন্তরিকতায় নারীর ক্ষমতায়ন : হাসপাতালের বিছানায় বসেই পরীক্ষা

আন্তরিকতায় নারীর ক্ষমতায়ন : হাসপাতালের বিছানায় বসেই পরীক্ষা
ডন প্রতিবেদন : আন্তরিকতা থাকলে কী-না হয়; সেটাই আবার প্রমাণিত হলো খাদিজা আক্তারের বেলায়। ফলে বাচ্চা প্রসব করার পরদিনই হাসপাতালের বিছানায় বসেই পরীক্ষা দিতে পেরেছেন তিনি। এক্ষেত্রে হাসপাতালের বিছানার মাথার দিকটি একটু উঁচু করে রাখায় তা অনেকটা চেয়ারের মতো হয়। আর রোগীর খাবারের জন্য যে ছোট ট্রলি বা টেবিল, সেই টেবিলকে বানানো হয় পরীক্ষা হলের বেঞ্চ। আর পাশের সোফায় বসে ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক। রাজধানির মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালের চিত্র বলে দিয়েছে নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের বিছানায় বসে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জরাবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন খাদিজা আক্তার। পরীক্ষার সময় পাশেই বেবি কটে ঘুমিয়ে ছিলো মেয়ে। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই মেয়ের জন্ম দেন খাদিজা। আজ বেলা তিনটার দিকে মোহাম্মদপুরের ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে কথা হয় খাদিজা ও তাঁর স্বামী আলী শাহরুফ জীমের সঙ্গে। শরীরে কাটাছেঁড়া যন্ত্রণার পাশাপাশি পরীক্ষার ধকলে কাহিল থাকার কথা থাকলেও খাদিজার মুখের হাসিই বলে দিচ্ছিলো, খাদিজা আক্তার পরীক্ষা দিতে পেরে কতোটা খুশি হয়েছেন। বললেন, ‘গতকাল রাতে মেয়ের জন্ম হয়। পোস্ট-অপারেটিভে ছিলাম।’ ‘আজ সকাল থেকে শুধু ভাবছিলাম, কখন আমাকে কেবিনে দেবে। কেবিনে এসে বার্ধক্যবিষয়ক জরাবিজ্ঞানের বইটি একটু নেড়েচেড়েও দেখেছি। শুধু মনে হয়েছে, আর একটু যদি পড়ে নিতে পারতাম। চিকিৎসক ব্যাথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ দিয়েছিলেন। আর পরীক্ষার সময় শরীরের ব্যথার কথা প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম। শুধু মনে হয়েছে, যে করেই হোক, পরীক্ষাটা দিতে হবে। পরীক্ষা বেশ ভালোই হয়েছে।’ এভাবে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি। খাদিজার এর আগের পরীক্ষাটি ছিলো ২৬ সেপ্টেম্বর। খাদিজা ইডেন মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হলে গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনায় পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। চলতি মাসের ২২ তারিখ পরীক্ষা শুরু হয়। আগের পরীক্ষাগুলো খাদিজা ঢাকা কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েই দিয়েছেন। আগামি ৩ অক্টোবর তাঁর শেষ পরীক্ষা। খাদিজা আশা করছেন, শেষ পরীক্ষাটি তিনি কেন্দ্রে বসেই দিতে পারবেন। খাদিজা ও শাহরুফের বিয়ে হয় গত বছরের মার্চ মাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়ে আইটি বিভাগে কর্মরত আছেন শাহরুফ।