স্বপ্নাতুর নেপালের সামনে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ফটোসেশনের সময় নেপাল অধিনায়ক আঞ্জিলা তুম্বাপো সুব্বা প্রথম স্পর্শ করলেন ট্রফি। এটা দেখে সাবিনা মুচকি হাসি দিলেন কিনা, দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল না। পরে তিনি হাত রাখলেন ট্রফির বেদিতে। চওড়া হাসি দিয়ে দিলেন পোজ। তার আগেই সংবাদ সম্মেলনে এসে, উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট ধরে রাখার বার্তা দৃঢ় কণ্ঠে দেন বাংলাদেশ কোচ।
দুই বছর আগে এই নেপালে দুহাত ভরে পেয়েছিল বাংলাদেশ। কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছিলেন সাবিনা। সেই একই আঙিনায়, সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বুধবার (৩০ অক্টোব বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় লড়বে বাংলাদেশ।
দুই দলই অপরাজিত থেকে ফাইনালের মঞ্চে উঠেছে। অন্ত্যমিল আছে আরও। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ, ভুটানের বিপক্ষে নেপাল গ্রুপ পর্ব শুরু করেছিল গোলশূন্য ড্রয়ের ধাক্কা খেয়ে। পরে দুই দলই গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পার হয় গ্রুপ সেরা হয়ে! গ্রুপ পর্বে অমিল বলতে বাংলাদেশ দুই ম্যাচে ৪ গোল দিয়ে হজম করেছিল দুটি; তিন ম্যাচে নেপাল ১৭টি দিয়ে ক্লিনশিট রেখেছিল তিন ম্যাচেই।
সেমি-ফাইনালে ভুটানকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে বাংলাদেশ। তহুরা খাতুনের হ্যাটট্রিকে জয় আসে ৭-১ গোলের। ঘটনাবহুল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নেপাল জয় পায় টাইব্রেকারে।
নতুন ফাইনালের আগে ঘুরে ফিরে আসছে পুরোনো ফাইনাল। তবে, অতীতকে অতীতের পাতায় রেখে বর্তমান নিয়ে ভাবার কথা বলেছেন নেপাল অধিনায়ক আঞ্জিলা। কম যান নি সাবিনাও। তাঁর দলের মধ্যে কোন্দল, বিতর্কের চোরাস্রোত বয়ে চললেও মাঠের খেলায় কোনও ঘাটতি থাকবে না, বলেছেন অধিনায়ক।
ফাইনালের আগে দুই দলেরই দুর্ভাবনা আছে নানা দিক নিয়ে। ভারত ম্যাচে লাল কার্ড পাওয়ায় চলতি আসরে ৭ গোল করা রেখা পোডেলকে ফাইনালে পাচ্ছে না নেপাল। এদিকে পায়ের চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেন নি পাকিস্তান ম্যাচে বাংলাদেশকে স্বস্তির গোল এনে দেওয়া শামসুন্নাহার জুনিয়র।
বাংলাদেশ কোচ বাটলার অবশ্য বরাবরই গম্ভীর টাইপের মানুষ। কদাচিৎ এই ইংলিশ কোচের মুখে মেলে হাসির দেখা। মঙ্গলবার দশরথ স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনেও তাঁকে দেখা গেলো চিন্তিত ভঙ্গিতে। শামসুন্নাহার জুনিয়রকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘ইংলিশ’ মানসিকতাই দেখালেন তিনি।
'সকালে আমি শামসুন্নাহারের চোটের অবস্থা পরীক্ষা করেছি। ভালো দেখেছি। আজ আমরা ভারি অনুশীলন করবো না। হালকা অনুশীলন করবো। কাউকে নিয়ে চোটের ঝুঁকি নেবো না। আমার হাতে খেলোয়াড় আছে, দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই পরিবেশ আমি তৈরি করেছি। তবে যেই খেলুক, সেই তাঁরা সেরাটা দিবে। শামসুন্নাহার গত ম্যাচে খেলতে পারে নি, তাঁর জায়গায় সাগরিকা খেলেছে। এটা নিয়ে নাটকীয়তা করার কিছু নেই।'
ট্যাকটিক্যালি ও টেকনিক্যালি বাংলাদেশ এগিয়ে, সংবাদ সম্মেলনে নেপাল কোচ রাজেন্দ্রা তামাং স্পষ্ট করেই বলেছেন এ কথা। তবে মাটিতে পা রাখছেন বাটলার। প্রতিপক্ষ দলের আক্রমণভাগে ফরাসি লিগে খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ সাবিত্রা ভাণ্ডারির মতো ফরোয়ার্ড ছাড়াও আছেন প্রীতি রায়ের মতো নির্ভরতা।
বাংলাদেশের আক্রমণভাগেও রসদ কম নেই, তহুরা এরই মধ্যে করেছেন পাঁচ গোল। রক্ষণে আঁখি খাতুনের শুন্যতা অনুভূত হতে দিচ্ছেন না আফিদা খন্দকার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ কোচের তাই মনে হচ্ছে, লড়াই হবে জমজমাট।
'শিহরণ জাগানীয়া ফাইনাল হবে। আমরা অনেকটা পথ এসেছি, আরও এগিয়ে যেতে চাই। নেপালের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধা আছে আমার। যখন আপনি ফাইনালে খেলবেন, তখন সবকিছু সেরাভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কখনও কখনও উপলক্ষ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমি জানি, আগামীকালের ম্যাচে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে সঠিক মানসিকতা, মনোভাব নিয়ে আমরা খেলতে পারি।'
নেপালের ম্যাচ মানেই দশরথের গ্যালারির অবস্থা হয়, ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে…’। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও তা দেখা গেছে। সারাক্ষণ হৈ-হুল্লোড়, স্লোগান দিয়ে আঞ্জিলা-সাবিত্রাদের অনুপ্রাণিত করতে থাকেন সমর্থকরা। ফাইনালে বাংলাদেশের ‘আরেক প্রতিপক্ষ’ থাকবে এই সমর্থকরাও। বাটলার অবশ্য এ নিয়ে চিন্তিত নন মোটেও।
'এই মেয়েরা এত দর্শকের সামনে অতীতেও খেলেছে, আমি নিশ্চিত, এটা তাঁদের জন্য কোনও সমস্যা হবে না। আসলে বিষয়গুলো নির্ভর করবে, উপলক্ষটা মেয়েরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, তার ওপর।'