ডন প্রতিবেদন : আজ (শনিবার : ৫ ফেব্রুয়ারি) সরস্বতী পূজা। হিন্দু বিশ্বাসে- সরস্বতী বিদ্যা, বাণী আর সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শুভ্র রাজহংসে চেপে দেবী সরস্বতী আসেন জগতে। গতকাল মধ্যরাতে প্রতিমা স্থাপন করে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সূচিত হয়েছে। চলবে আজ রাত অবধি। সনাতন ধর্মীয় রীতিতে প্রত্যুষে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হবে।
এরপর চরণামৃত নেবেন ভক্তরা। সকাল ৯টার দিকে হবে বাণী-অর্চনা। পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/ বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্ত্ততে’—এ মন্ত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করবেন, পূজার আচার পালন করবেন। এরপর ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। তাঁদের বিশ্বাস, দেবী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে। আজ শীতল পঞ্চমীতে শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথা প্রচলিত আছে। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতীসদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াত-কলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিলো। পঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করতো।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আজ বাণী-অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা হবে। পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনাসভা, সন্ধ্যা আরতি এবং আলোকসজ্জা প্রভৃতি হবে।
বাংলাদেশ পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, সরস্বতী পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সর্বজনীন পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে, করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ বছর সেসব আয়োজন থাকছে না। পূজামণ্ডপে সীমিত আকারে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ছোট পরিসরে হচ্ছে পূজা : করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছোট পরিসরে উদ্যাপন করা হচ্ছে সরস্বতী পূজা। একটিমাত্র মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ পূজা উদ্যাপন করা হচ্ছে।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার একটি আলাদা ঐতিহ্য আছে। গত বছর করোনার কারণে সেই ঐতিহ্যের ব্যত্যয় ঘটেছিলো। সেই সময় হল ছিলো শিক্ষার্থীশূন্য। তবুও নিয়ম রক্ষার্থে পূজা হয়েছিলো। এবার হলে শিক্ষার্থী আছে, কিন্তু মাঠভরে পূজা হচ্ছে না। শুধু উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
‘করোনার সংক্রমণ কম থাকায় প্রাথমিকভাবে বিভাগভিত্তিক পূজার সিদ্ধান্ত নিলেও ওমিক্রন এ বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনঃকষ্ট থাকলেও হল প্রশাসনের একটিমাত্র কেন্দ্রীয় পূজার সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।’
‘মণ্ডপে প্রবেশে কোনও বিধিনিষেধ না থাকলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশের অনুরোধ জানান তিনি। আগামী বছর পুরোনো আমেজে আবারও পূজা উদ্যাপন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজা : এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ বার প্রথম বারের মতো সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।