ভুটানকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : প্রতিপক্ষ ভুটান হলে জয়ের ব্যাপারে একটু বেশি আশাবাদী হয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। আশা অনুযায়ী মেয়েরা সেরাটাই দিয়েছেন রবিবার (২৭ অক্টোবর)৬ কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায়। সাফ নারী ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই জয়টা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় লালসবুজের মেয়েদের।
তহুরা খাতুন ও অধিনায়ক সাবিনার জোড়া গোলে এই অর্ধে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছিল ৫-১ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে গোল আসে দুটি। তহুরা হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন এই অর্ধে। ম্যাচসেরা তহুরার তিনটি গোলই বাঁ পায়ের শটে। প্রথম দুটি বক্সের বাইরে থেকে। দ্বিতীয়ার্ধে অন্য গোলটি এনে দেন ডিফেন্ডার শিউলি আজিম। সেমিফাইনালের মতো বড় ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৭-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে।
দক্ষিণ এশিয়ার ‘নারী বিশ্বকাপ’ নামে খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে ২০১৬ সালে। সেবার শিরোপা লড়াইয়ে ৩-১ গোলে হারতে হয় ভারতের কাছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিদায় সেমিতে। ২০২২ সালে সর্বশেষ সাফে ফাইনালে উঠে অবশ্য আর হতাশা নয়। স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। শিরোপা ধরে রাখার শেষ লড়াই এবার ৩০ অক্টোবর। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ সামনে পাবে নেপাল-ভারত দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দলকে।
সপ্তম মিনিটে বাংলাদেশের গোল উৎসবের সূচনা করেন ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা। চোটে পড়া ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়রের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া সাগরিকা থেকে তহুরার পা ঘুরে বল পান ঋতুপর্ণা। ঋতু বক্সের কোনা থেকে বাঁ পায়ের দারুণ শটে বল পাঠান জালে। ১১ মিনিটে ব্যবধান বাড়তে পারত। কিন্তু ঋতুর ক্রস থেকে সাগরিকার হেড গোললাইন থেকে হেডে সেভ করেন ভুটানের এক ডিফেন্ডার।
১৪ মিনিটে ২-০ হয়েছে। শিউলি থেকে বল পেয়ে বক্সের সামনে থেকে বাঁ পায়ের দারুণ শটে তহুরা করেন ২-০। ২৫ মিনিটে সাবিনার প্লেসিং লাগে ভুটানের সাইড পোস্টে। পরক্ষণেই অবশ্য মনিকার গোলমুখে ফেলা বল সহজেই প্লেসিং করেন সাবিনা। টুর্নামেন্টে যেটি তাঁর প্রথম গোল। আগের দিন অসুস্থ থাকায় অনুশীলন করতে না পারা সাবিনার খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু মাঠে নেমে জ্বলে উঠেছেন।
৩৪ মিনিটে আবারও তহুরা-ঝলক। বাঁ পায়ের চোখধাঁধানো বাঁকানো শটে করেন ৪-০। দুই মিনিট পরই ভুটানের গোলকিপারকে কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোলটি করেন সাবিনা। ৫৮ মিনিটে তহুরা খাতুন নিজের তৃতীয় ও দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন। বদলি নামা সানজিদার কর্নারে শিউলি আজমের হেডে ৭২ মিনিটে হয় ৭-১।
দ্বিতীয় গোলের ওপর ভুটানের মেয়েরা কিছুটা মাথা তোলার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশের রক্ষণেও তাঁরা দুবার বল নিয়ে এসে গোলের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু ভুটান গোল করবে কী, গোল ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিল বেশি। তবে ৪০ মিনিটে একটি গোল শোধ করতে পেরেছে ভুটান। গোল করেছেন ভুটানের স্ট্রাইকার দেকি হাজম। দ্বিতীয়ার্ধে দুটি বদল নিয়ে নামে ভুটান। বদলি দুজনই গোলের সুযোগ তৈরি করেন। তবে গোল আসে নি, উল্টো দুটি গোল খেয়েছে তাঁরা। গ্যালারি থেকে ‘ভুটান, ভুটান’ স্লোগানও কোনও কাজে আসে নি।
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গত সাফের সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ব্যবধানটা এবার কাছাকাছিই। পাত্তাই পায় নি ভুটান, যাঁরা এই টুর্নামেন্টে স্বাগতিক নেপালের সঙ্গে গোলশুন্য ড্র করেছে। শ্রীলঙ্কাকে ৪ ও মালদ্বীপকে দিয়েছে ১৩ গোল। গ্রুপ পর্বে ৩ ম্যাচে করেছে ১৭ গোল। সেমিফাইনালে সেই ভুটান কোনও লড়াই-ই করতে পারে নি আত্মবিশ্বাসী ও শক্তিতে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সঙ্গে।
জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ৬৩ মিনিটে একসঙ্গে তিনটি বদল আনেন বাংলাদেশ কোচ। এরপর বদল আনেন আরও দুটি। জয় নিয়ে যখন কোনও চিন্তাই নেই, বেঞ্চটা তো একটু দেখে নেওয়াই যায়।