ইউক্রেন নিয়ে বিভক্ত মার্কিন ভোটাররা : কেরি বয়েড অ্যান্ডারসন

ইউক্রেন নিয়ে বিভক্ত মার্কিন ভোটাররা : কেরি বয়েড অ্যান্ডারসন

উপ-সম্পাদকীয় মত, বাঙলার কাগজ : ওয়াশিংটনের অনেক পররাষ্ট্রনীতিনির্ধারকের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ শীর্ষ উদ্বেগের বিষয় হলেও অনেক মার্কিন ভোটারের তালিকায় বিষয়টি শীর্ষ অগ্রাধিকারে নেই।

সাম্প্রতিক জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, মার্কিনরা রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ বলছে, ৬২ শতাংশ মার্কিন ভোটার ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতিশীল। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—দুই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মধ্যেই ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। এর বিপরীতে খুব কমসংখ্যক মার্কিন ভোটার রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল।

যাহোক, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—দুই পক্ষের ভোটাররা ব্যাপকভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করলেও এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে দুই পক্ষের ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

জুলাই মাসে করা পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, তিন ভাগের এক ভাগ মার্কিন বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে। যুদ্ধের শুরুতে অবশ্য আরও অনেক বেশি মার্কিন এটা মনে করতেন। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বড় হুমকি তৈরি করেছে। রিপাবলিকানদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ মনে করছেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি।

ইউক্রেনকে রক্ষা করার দায়িত্ব মার্কিনদের কি না—এ প্রশ্ন নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। পিউ রিসার্চের ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ৬৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ও ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকে থাকা ভোটাররা বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যদিকে রিপাবলিকান ও রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে থাকা ভোটারদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মনে করেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নয়।

আবার ইউক্রেনকে কত দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া উচিত—এ প্রশ্নে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপ বলছে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ মনে করেন, যত দিন পর্যন্ত দরকার, তত দিন ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে এই চিন্তার সমর্থক মাত্র ৩৭ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে, সেটা যথেষ্ট কি না—এই প্রশ্নেও ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ৩৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মনে করেন, ইউক্রেনকে এখন যা দেওয়া হচ্ছে সেটা যথেষ্ট; ১৯ শতাংশ মনে করেন, এটা খুব সামান্য আর ১৬ শতাংশ মনে করেন, এটা অনেক বেশি। রিপাবলিকানদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ মনে করেন, ইউক্রেনকে এখন যে পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সেটা ঠিক আছে, আর ৫২ শতাংশ বলেছেন, এটা অনেক বেশি।

পার্টির মনোনীত প্রার্থীর অবস্থান থেকেও মার্কিনদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতাকে ধরা যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস মূলত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে সহযোগিতার কথা বলছেন। সাধ্যের মধ্যে তিনি ইউক্রেনকে সহায়তা করে যেতে চান। তিনি প্রকাশ্যেই ইউক্রেনকে সহযোগিতার ব্যাপারে উমেদারি করছেন। এ ব্যাপারে ইউরোপীয় মিত্রদেরও উৎসাহিত করছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের জন্য যেকোনো চুক্তি হলে তাতে অবশ্যই ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, তিনি নির্বাচিত হলে খুব দ্রুতই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। কিন্তু কীভাবে সেটা করবেন, তার ব্যাখ্যা তিনি দেননি। যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ সহায়তা ইউক্রেনকে পাঠিয়েছে, তার কঠোর সমালোচক ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রশংসা করার দীর্ঘ ইতিহাস তাঁর রয়েছে। ট্রাম্পের রানিং মেট জে ডি ভ্যান্স মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়ার পরও ইউক্রেন যদি তার ভূখণ্ড জিততে না পারে, তাহলে তাদের সহায়তা করে যাওয়ার ব্যাপারে মার্কিনদের কোনো স্বার্থ থাকতে পারে না।

ভ্যান্স বলেছেন, ওয়াশিংটনের উচিত রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে চীনকে মনোযোগের কেন্দ্রে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের একজন সদস্য হিসেবে ভ্যান্স ইউক্রেনকে অর্থায়নের বিরোধিতা করেছিলেন।

যাহোক, ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুটি মূল ভূমিকা পালন করবে না। পররাষ্ট্র বিষয়ের মধ্যে মার্কিন ভোটাররা রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বেশি চিন্তিত। সহানুভূতি যে সব সময় সক্রিয় সমর্থনে পরিণত হয় না, তার বাস্তব অভিজ্ঞতা ভোগ করছে ইউক্রেন।

কেরি বয়েড অ্যান্ডারসন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিষয়ে বিশ্লেষক

আরব নিউজ থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত