শফিকের সময়ে এসআইবিএলের ৭ শাখায় ২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি

শফিকের সময়ে এসআইবিএলের ৭ শাখায় ২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : হলমার্ক এবং হলমার্ক জাতীয় জালিয়াতি করেছেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিকুর রহমান। তার আমলের মাত্র ৭ শাখায় ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জালিয়াতির ব্যাপারে জানার জন্য মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে এসআইবিএলের সাবেক এমডি শফিকুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও সেটি ব্যস্ত পাওয়া গেছে। এরপর আবারও ফোন দেওয়া হয়, তখনও সেটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কোনও নম্বর ব্লক করে রাখলে, যে ব্যস্ততার কথা অপর প্রান্ত থেকে আসে, সেটিই এসেছে শফিকুর রহমানের মুঠোফোন থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, এসআইবিএল এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পছন্দের লোকদের ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া, দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকটিতে একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন শফিকুর রহমান। সিএসআরের টাকার অপব্যবহার, কর্মী নিয়োগের নামে ঘুষ গ্রহণসহ অনেক ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়ায় তার আমলে সৎ কর্মকর্তারা নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন।

শফিকের সময়ে এসআইবিএলের ৭ শাখায় ২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি : বেসরকারি খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ৭ শাখায় ২ হাজার ১৫১ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। এতে শফিকুর রহমান জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এক্ষেত্রে ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখায় ৫৫০ কোটি, গুলশান শাখায় ৫৭৮ কোটি, বাবুবাজার শাখায় ২২৩ কোটি, খাতুনগঞ্জ শাখায় ১৬৫ কোটি, গাউছিয়া শাখায় ১৪০ কোটি, মাধবদী শাখায় ৫৫ কোটি এবং আগ্রাবাদ শাখায় ৪৪০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

আরও জালিয়াতি : এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার নামে ৮০ কোটি টাকা মুনাফাবিহীন ঋণ দিয়েছিলেন শফিকুর রহমান। ওই হাসপাতালের এমডি ছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান রেজাউল হকের স্ত্রী। ব্যাংকের টাকা এভাবে কোথাও ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। 

সূত্র আরও জানায়, জামানত ছাড়াই নিয়মনীতি ভঙ্গ করে কয়েক শ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন শফিকুর রহমান।

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ব্যাংকে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন শফিকুর রহমান। তিনি শরিয়াহ্‌ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের নামে আমানতকারীদের টাকা হুজি জঙ্গিদের নাশকতামূলক কার্যক্রমে অর্থায়ন করেছেন।

শফিকুর রহমানের নামে দুদকে সম্প্রতি জমা হওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তিনি বিভিন্ন বিলের ভাউচার, সাইনবোর্ড তৈরি, বিজ্ঞাপন ও প্রভৃতি খাতে ভুয়া বিল তৈরি করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

তাঁর সময়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা করা হয় ঢাকার পরিবর্তে সিলেটে। দলীয় ক্যাডারদের পাহারার কারণে সভায় ঢুকতে পারেন নি সাধারণ শেয়ার হোল্ডারেরা।

সূত্র আরও জানায়, শফিকুর রহমানের সময়ে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরুৎসাহিত করলেও বছরের ব্যবধানেই এ ধরনের ঋণ বিতরণ দ্বিগুণ বেড়ে যায় এসআইবিএলে। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণগ্রহীতা ছিলেন ১০ জন। তাঁরা ব্যাংকটি থেকে ২ হাজার ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে বড় গ্রাহক বেড়ে দাঁড়ায় ২০ জনে। তাঁরা নেন ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি গ্রাহকদেরকেও ঋণ দেওয়া হয়েছে। ইস্কাটন শাখার এক গ্রাহককে দেওয়া ২ শ কোটি টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। ভুয়া এলসি দেখিয়ে বাবুবাজার শাখার এক গ্রাহককে দেওয়া হয় ৪০ কোটি টাকার ঋণ। আগ্রাবাদ শাখা থেকে আমদানি-রপ্তানির নামে ২৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এক গ্রাহক। যেখানে ঋণের অধিকাংশ টাকা পাচার করা হয়েছে। খাতুনগঞ্জ শাখার এক গ্রাহককে মালামাল সরবারহের জন্য দেওয়া হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। ওই গ্রাহক কর্মচারীদের নামেও অ্যাকাউন্ট খুলে ঋণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।