ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ‘এনজিও’!

ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ‘এনজিও’!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; তজুমদ্দিন (ভোলা) : ভোলার তজুমদ্দিনে নবলোক নামের একটি এনজিও ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৪ জুলাই প্রায় অর্ধশত গ্রাহক ঋণের টাকা নিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখেন। পরে গ্রাহকেরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, সম্প্রতি তজুমদ্দিন উপজেলার গোডাউন রোডের শ্রমিক কালা চান দাসের বাসা ভাড়া নেয় নবলোক নামের একটি এনজিও। গত ২৮ জুন থেকে ওই বাসায় এনজিওর অফিস চালু করেন এক নারীসহ ৩ ব্যক্তি। গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন কয়েক লাখ টাকা। ঋণ বিতরণের নির্ধারিত সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক গ্রাহক এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখে সন্দেহ হয়। পরে কর্মকর্তাদের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পান। 

এ সময় ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় থানায় অভিযোগ করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা নবলোক নামের একটি এনজিওর পরিচয় দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের আওতায় উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের পঞ্চায়েত কান্দি, বাদুরা, খাশের হাট, কালির বাজার, দেওয়ানপুর, চৌমুহনী, সোনাপুরের ইন্দ্রনারায়ণ পুর, চাপড়ি, শম্ভরপুরের ভুবন ঠাকুর, গোলকপুর এবং শিবপুরসহ অন্তত ২৫টি এলাকায় সমবায় সমিতি গঠন করে। ঋণ প্রদানের ফাঁদে ফেলে এসব গ্রাহকদের থেকে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হারে এককালীন সঞ্চয় নেয় তারা। গত ৪ জুলাই কয়েকটি সমিতিকে ঋণ বিতরণের তারিখ ধার্য্য করা হয়। ঋণের টাকা নিয়ে এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। 

প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ সঞ্চয়ের নামে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা। 

অফিসের সামনে সাঁটানো একটি সাইনবোর্ডে পিকেএসএফর অর্থায়নে পরিচালিত ঋণ কার্যক্রমের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির একটি সনদ নম্বরও দেওয়া আছে। সদস্যদের দেওয়া পাশ বইতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় লেখা রয়েছে খুলনা জেলা সদরের নিরালা রোডে।

আড়ালিয়ার বাদুড়া গ্রামের ভুক্তভোগী মো. হান্নান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমাকে ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় নেয়। ঋণের টাকা নিতে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। আমাদের এলাকায় সমিতি গঠন করে আমার সঙ্গে আরও প্রায় ২০-২৫ জনের কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়।’ 

বাড়ির মালিক কালা চাঁদ দাস বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘১ সপ্তাহ আগে এনজিও নবলোককে বাসা ভাড়া দেই। কিন্তু তাদের সাথে আগামী ৬ জুলাই এক বছরের অগ্রিম ভাড়া প্রদান সাপেক্ষে লিখিত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যার পর বাসায় তালা লাগিয়ে তারা নিরুদ্দেশ হন। ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’ 

বাসায় উঠার সময় তাদের কাছ থেকে কোনও পরিচয়পত্র রাখা হয় নি বলেই তিনি জানান।

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জিয়াউল হক বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। প্রতারকদের বিষয়ে সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারে নি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মরিময় বেগম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘নবলোক নামে এনজিওর কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হয় নি। এই এনজিওর কোনও তথ্য জানা নেই। টাকা লেনদেনের বিষয়ে এলাকার কোনও জনপ্রতিনিধিও আমাদের অবহিত করে নি।’