লালন স্মরণোৎসবের শেষদিন
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আয়োজিত তিনদিনের লালন স্মরণোৎসবের শেষ হচ্ছে আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর)। গত দু’দিন লালন ভক্ত, অনুসারী বাউল, ফকিরদের গান, সাধুসঙ্গ, ভাব আলোচনাসহ নানা কর্মকাণ্ডে মুখরিত ছিলো আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। আজ ভাঙবে সেই মিলনমেলা।
এর আগে গতকাল সকালে বাল্যসেবায় দই ও চিড়া নাশতা দেওয়া হয় বাউলদের। দুপুরে পুণ্যসেবায় ভাত, ডাল, সবজি ও ইলিশ খান তাঁরা। এরপর লালন মতে দীক্ষিতদের শিষ্যত্ব প্রদান করেন তাঁদের নিজ নিজ গুরুরা। এসব লৌকিক রীতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় লালন শাহের তিরোধান দিবসে বাউল ও ভক্তদের মূল অনুষ্ঠান সাধুসঙ্গ। তার আগে গত বৃহস্পতিবার চিরাচরিত গুরুবাদী ধর্মের নিয়মে সূর্য ডোবার পরপরই অধিবাসের মাধ্যমে শুরু হয় বাউল ফকিরদের অষ্টপ্রহরের গুরুকার্য।
সাধুসঙ্গ গতকাল সাঙ্গ হলেও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে তিন দিনব্যাপী আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ মধ্যরাতে। তবে স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া গ্রামীণ মেলা চলবে আরও কয়েকদিন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো আখড়াবাড়িতে যেনো তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান, আলোচনা আর ভাব বিনিময়ে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণজুড়ে যেনো বিরাজ করছে অন্যরকম এক পরিবেশ। দুপুর ২টার দিকে লালন একাডেমির প্রবেশপথ, লালন শাহর মাজার প্রাঙ্গণ, আখড়াবাড়ি, মেলার মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। আখড়াবাড়ির ভেতরে হাজার হাজার বাউল ও লালন অনুসারী সাদা কাপড় পরা। অন্য পোশাকেও আছেন অনেকে। দুপুরে তাঁদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুণ্যসেবার ভাত, ডাল, সবজি ও ইলিশ খেতে দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী সাধু-গুরুরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।
কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা অধম রিদন ফকিরের সঙ্গে। তিনি ২৯ বছর ধরে আখড়াবাড়িতে এসে লালন দর্শনের ছায়া খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কেউ ইমাম হচ্ছে, কেউ প্রকৌশলী-চিকিৎসক হচ্ছে। তাহলে মানুষ হবেন কোথায় গেলে? বাস্তব দর্শনের ওপর লালন সাঁই মানুষ হওয়ার স্কুল খুলেছেন।’
লালন একাডেমির শিক্ষার্থী মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘সাঁইজি সব সময় মানুষকে ভালো পথে আনা ও ভালোবাসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই স্রষ্টা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। সেজন্য সাঁইজি বলেছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা কলেজছাত্র সৈকত আহমেদ বলেন, লালনের বাণী ও গান ধর্ম, বর্ণ, জাতির ঊর্ধ্বে। তাই মায়ার টানে আখড়াবাড়িতে এসেছি। অতীতের তুলনায় এবার ভিড় বেশি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।