দ্রব্যমূল্য নাগালে না এলে মানুষ রাস্তায় নামতে পারে : সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে না পারলে মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসতে পারে বলেই মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াকে ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের ফায়ার সার্ভিস মাঠে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথাগুলো বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বৃহত্তর মিরপুর এই সভার আয়োজন করে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনা না যাবে এবং যানজট সমস্যার সমাধান না করা যাবে, সাধারণ মানুষ অধৈর্য হয়ে যাবে। আপনারা দ্রুততম সময়ে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনুন। না হলে এই সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনও সময় মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে পারে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, স্বচ্ছতা, নৈতিকতা, সত্য ও বাংলাদেশের প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকেই আপসহীন। ফ্যাসিবাদমুক্তির পথে যাত্রা ততক্ষণ পর্যন্ত সফল হবে না, যতক্ষণ না এই দেশ থেকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার চূড়ান্ত বিলোপ হয়। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ, বিচারব্যবস্থা, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত— এগুলো শুনে আমাদের পেট ভরবে না। বাজারে গিয়ে যখন দেখা যায় জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে, রাস্তায় যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে (যানজটে) বসে থাকতে হয়, তখন অবচেতনভাবেই আমাদের মনে এই ধারণা হয় যে “আগেই ভালো ছিলাম”।’ হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটকে ফ্যাসিবাদের ‘চূড়ান্ত চক্রান্ত’ বলে আখ্যা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘ছোট ছোট মনোমালিন্য, বিভাজন ও ভুল–বোঝাবুঝির কারণে অভ্যুত্থানের স্পিরিট (চেতনা) থেকে কোনও না কোনোভাবে হয়তো কিছুটা দূরে যাচ্ছি। মনে রাখবেন, এখনো আমাদের চ্যালেঞ্জ শেষ হয় নি। অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখার সময় শেষ হয়ে যায় নি।’
সারজিস বলেন, ‘এই স্পিরিটকে সামনে রেখে সামনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার যত দিন না আসছে, তত দিন ফ্যাসিস্টের দোসররা বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়ে, বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে আপনাদের মাঝে আসবে, বিভাজন তৈরি করে আপনাদের মুখোমুখি দাঁড় করাবে, বিভিন্ন স্বার্থের লোভ তৈরি করবে এবং সংঘর্ষ বাধিয়ে আপনাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘টাকার লোভ দেখানো হলে লুটেরা ও অত্যাচারকারী সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকদের হাতকড়া পরে আদালতে যাওয়ার চিত্রটা মাথায় রাখবেন। ওই ভিডিওটা আপনার টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখবেন।’
আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের মামলা করতে গিয়ে এখনো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সারজিস। তিনি বলেন, ‘যে পুলিশ এখনো মামলা নিতে গড়িমসি করে, আসামি ধরতে টাকার জন্য বসে থাকে, যে পুলিশ এখনো অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে নি, সেই পুলিশকে আমরা ছাত্র-জনতার পুলিশ মনে করি না।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম ও আবদুল কাদের বক্তব্য দেন। আবদুল কাদের ৫ আগস্টের পর আন্দোলনকারীদের বিভাজনের জন্য হতাশা ব্যক্ত করেন। তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিলোপের লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’