যাত্রী কল্যাণ সমিতি : অনেক বাস শিক্ষার্থীদের ওঠায় না ও অর্ধেক ভাড়া নেয় না।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি : অনেক বাস শিক্ষার্থীদের ওঠায় না ও অর্ধেক ভাড়া নেয় না।
ডন প্রতিবেদন : রাজধানীর অনেক বাসে শিক্ষার্থীদের ওঠানো হয় না। অনেক বাস অর্ধেক ভাড়া নেয় না। শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া দিলে তাঁদেরসঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। বাস থেকে নামার সময় শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে যে কোনও সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সড়ক পরিবহনের নৈরাজ্য নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব অভিযোগের কথা জানিয়েছে। আজ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সব পথের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস ও সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকরের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সমিতির মহাসচিব বলেন, নিরাপদ সড়কের সব উদ্যোগ আটকে যাচ্ছে প্রভাবশালী পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে। সাড়ে তিন বছর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকার অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো এবং কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছেড়ে শ্রেণিকক্ষে ফেরার পর বিভিন্ন দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা রাস্তায় নামেন। এরপর সরকারের প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগ- সব আটকে যায়। ফলে ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গিয়েছিলো, চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই তা ছাড়িয়ে গেছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, যখন যে পক্ষ শক্তি দেখাতে পারে, সে পক্ষকে খুশি করার চেষ্টা করে সরকার। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা যেহেতু সংগঠিত এবং প্রভাবশালী, দিনশেষে সরকারি সিদ্ধান্ত তাঁদের পক্ষেই যায়। ‘পরিবহন খাতে দীর্ঘদিন ধরে সুশাসন অনুপস্থিত আছে’ উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৩০ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো। এর সিংহভাগই বাস্তবায়ন হয় নি। অন্যদিকে শাহজাহান খানের নেতৃত্বে ১০১ দফা সুপারিশ প্রণয়নের পর তা এখন ডিপফ্রিজে আটকা পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবহন খাতে সুশাসন অনুপস্থিত। এ কারণে যে যার মতো করে চলছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সড়কে সবাই ইচ্ছেমতো প্রভাব বিস্তার করে আইন ভাঙছেন। চাঁদাবাজি, হয়রানি ও নৈরাজ্য এখন চরম আকার ধারণ করেছে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলো। তখন সবাই বলেছিলেন শিক্ষার্থীরা তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে। কিন্তু দেখা গেলো, কিছুদিন পর সবই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। রাস্তায় মৃত্যু বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় ফিরে এলো। সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরিফুজ্জামান বলেন, নিরাপদ সড়ক নিয়ে শিক্ষার্থীদেরসঙ্গে সরকার মিথ্যাচার করছে। শিক্ষার্থীদের এখন যা দাবি ২০১৮ সালেও একই দাবি ছিলো। শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারের কাছে, কিন্তু সরকার শিক্ষার্থীদের কথা শুনছে না, কৌশল করে মালিক সমিতির কথা শুনছে। সড়কে এ নৈরাজ্যের দায় সরকারের। কারণ, সরকারই এমন ব্যবস্থা তৈরি করে দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম প্রমুখ। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলন শুধু হাফ ভাড়ার জন্য নয়, সড়কে পুরো অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্র এ বিশৃঙ্খলা বন্ধ না করলে, এর সমাধান পাওয়া কঠিন। দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারে না। সমিতির মহাসচিব বলেন, পরিবহন খাতের বর্তমান নেতৃত্ব ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে সরকারের কাছ থেকে নানাভাবে ফায়দা লুটছে। তাঁরা রাজধানীর বাসে বারবার ঘোষণা দিয়েও সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ না করে এসব গাড়িতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তিন থেকে চার গুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকের নেতৃত্বে পরিবর্তন জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০ দফা সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো : একজন শিক্ষার্থীকে তাঁর ছাত্রজীবনে সার্বক্ষণিক এবং যে কোনও দিন, যে কোনও সময় আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে সারাদেশের সড়ক, রেল, নৌপথে সব শ্রেণির গণপরিবহনে হাফ পাস সুবিধা নিয়ে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে; শিক্ষার্থীদের পরিবহনে নিতে অস্বীকৃতি জানালে, হাফ ভাড়া না নিলে, সংশ্লিষ্ট পরিবহনের চালক, সহকারী, কাউন্টারম্যান, টিকিট বিক্রয়কারীর কী শাস্তি হবে, তা স্পষ্ট করে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করতে হবে; সব শ্রেণির গণপরিবহনে দৈনিক চুক্তিতে ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে; সব শ্রেণির গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা স্পষ্ট আকারে দৃশ্যমান স্থানে টানাতে হবে; সিটিং সার্ভিস নামের ওয়েবিল প্রথা বাতিল করতে হবে; ভাড়া আদায় করলে অভিযুক্ত বাসের চালক-সরকারি পাশাপাশি মালিক-চেয়ারম্যান-এমডিকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।