দ্বৈত এনআইডি দিয়ে ৬৫ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি।

ডন সংবাদদাতা, ঢাকা : দ্বৈত জাতীয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে ঋণখেলাপিদের ঋণ পাওয়ার পথ সুগম করে দিতো নির্বাচন কমিশনের অসাধু ডেটা এন্ট্রি অপরারেটরদের কয়েকজন এবং একটি দালালচক্র। জানা গেছে, ঋণখেলাপির তালিকায় নাম। অথচ দরকার পুনরায় ঋণ, এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতেন চাকরিচ্যুত কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের অসাধু ডেটা এন্ট্রি অপরারেটরদের সহায়তায় তৈরি করা হতো দ্বৈত জাতীয় পরিচয়পত্র। পরে দ্বৈত এনআইডি দিয়ে আবেদন করা হতো ঋণের জন্য। এভাবেই কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৬৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এই তথ্য। আঙ্গুলের ছাপ, চোখের মণির প্রতিচ্ছবিসহ ৭ ধাপ পেরিয়ে পাওয়া যায় জাতীয় পরিচয়পত্র। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের সার্ভারে এই মুহূর্তে ২ লাখেরও বেশি দ্বৈত ভোটার রয়েছেন। অর্থাৎ দুটি করে জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। এদের কেউ কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে দ্বৈত জাতীয় পরিচয়পত্রের মালিক হয়েছেন। এক বছর তদন্ত শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের দুই ডেটা এন্ট্রি অপারেটরসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ । উঠে আসে ভুয়া তথ্য দিয়ে দ্বৈত জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির মাধ্যমে কীভাবে একটি চক্র ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলো। এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের মধ্যে সিদ্ধার্থ সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলাম নির্বাচন কমিশনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। এ ছাড়াও বাকি তিনজন সুমন পারভেজ, মোহাম্মদ মজিদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তাকারী। এই তিনজন এক সময় ব্যাংকে চাকরি করতেন। খেলাপি তালিকায় নাম ওঠায় যারা নতুন করে ঋণ নিতে অযোগ্য এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতেন পরভেজ, মজিদ, মামুন। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র করে দিতেন সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুল। পরবর্তীতে সেই পরিচয়পত্র দিয়ে পুনরায় তারা ঋণের জন্য আবেদন করেন। এই পাঁচজনের সহায়তায় সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়া আট ঋণগ্রহীতা কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৬৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। একেকটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে খরচ হতো ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। মোট ঋণের ১০ শতাংশ দিতে হতো ঘুষ। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘জালিয়াতেরসঙ্গে যারা জড়িত ছিলো, তারা একসময় ব্যাংকেই কাজ করত। পরবর্তীতে তারা ব্যাংক সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে দালালির কাজ করতো বলে জানা যায়। অতীত রেকর্ড খারাপ অর্থাৎ আগে ঋণখেলাপির রেকর্ড আছে, এমন কোনও ব্যক্তি ব্যাংকে গেলে এই দালালরা নির্বাচন কমিশনের অপারেটরদের সাহায্যে দ্বৈত এনআইডি বানিয়ে ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। পাওনা হিসেবে গৃহীত ঋণের ১০ শতাংশ দালালদের দিতে হতো; যার একাংশ চলে যেতো নির্বাচন কমিশনের অপারেটরদের হাতে।’ তবে অবাক হলেও সত্যি, ডিবির অভিযোগপত্রে নেই কোনও ব্যাংক কর্মকর্তার নাম। এ ছাড়াও দ্বিতীয়বার আঙুলের ছাপ বা চোখের মণির প্রতিচ্ছবি নেওয়ার সময়ই বিষয়টি ধরা পড়ার কথা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের সহায়তার কারণে জালিয়াতি ধরা পড়ে নি।