কালাম আঝাদ’র কলাম : শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিন

ডন : আমরা জানি, যে জাতি যতো বেশি শিক্ষিত, সে জাতি ততো বেশি উন্নত। এইতো গতকালই বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের সদর দপ্তর। আমাদের আশা, আর মাত্র ২০ বছর পরই আমরা আমাদেরকে উন্নত-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেদেরকে তুলে ধরতে পারবো। কিন্তু এমন আশাবাদ আশাবাদই থেকে যাবে, যদি না আমরা শিক্ষাকে মূল্যায়ন করতে পারি। গড়ে তুলতে পারি শিক্ষার্থীদের। এইতো ক’দিন আগেই আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফেরাতে পেরেছি। তারজন্য আমাদের কম ঝক্কি পোহাতে হয় নি। কেটেছে দেড় দেড়টি বছর। এমন অবস্থায় এখন তাঁরা নিরাপদে কোনও চাপ না রেখেই তাঁদের পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, এটাই আমাদের সুপ্রত্যাশা। কিন্তু এমন প্রত্যাশায় বাগড়া দিয়েছে অর্ধেক ভাড়া দেওয়া শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি- যা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী হত্যায় (দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা গেছেন)। আমরা তো জানি, একজন বাবা-মা তাঁর একটি সন্তানকে কতো কষ্ট করে মানুষ করেন, তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপে কতোটা পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে। আবার কতোটা পরিশ্রম করতে হয় একজন শিক্ষার্থীকে। সুতরাং তাঁদের কেনো হাফ পাসের জন্য রাস্তায় নামতে হবে; কেনো করতে হবে আন্দোলন। আর কেনোই বা সাইকেল চালাতে গিয়ে তাঁদের কোনও সহপাঠী নিহত হবে। আমি দেখেছি, যখন একটি বাস চলে, তখন তাতে যাত্রী কম হলেও বাসটি কিন্তু গন্তব্যে যায়; আবার যখন যাত্রী বেশি থাকে, তখনও কিন্তু বাসটি গন্তব্যে যায়- বরং বাসের কোনও কথা বলে একজন যাত্রীকেও কিন্তু নামিয়ে দেওয়া হয় না। আর রাজধানী ঢাকার মতো জনবহুল অঞ্চলে তো বাস পাওয়াটাই দুষ্কর; সুতরাং সেখানে কোনও বাসে যাত্রী কম থাকবে, সেটি ভাবাও যায় না। তাহলে দুইজন আর চারজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিতে সমস্যা কোথায়? সেটা সারাদেশের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিলেও কোনই সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে বাস মালিকদের বলবো, আপনারা যখন স্বল্প যাত্রী (পরিমাণে কম হলেও) নিয়েও গাড়ি চালান, তখন না হয় বাসে কোনও শিক্ষার্থী উঠলে তাঁকে গণনায় নাইবা ধরলেন। এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন, একজন বাড়তি যাত্রী বহন করতে হলে তো আমার টায়ারের ক্ষতিও বাড়ে, আবার জ্বালানি খরচও হয় এবং সিট পরিচর্যারও ব্যয় বাড়ে। তখন আমি বলবো, তাহলে আপনি এসবের জন্যই টাকাটা নিন; বাড়তি টাকা নিলেন না। ফলে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কিন্তু আপনাকে হাফ ভাড়া নিলেই হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং সর্বোপরি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জন্য আমি বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের যৌক্তিক দাবির বিষয়টি সুরাহা করুন এখনই। এখনই তাঁদের দাবি মেনে নিন। আর শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ সড়কের ব্যবস্থা করুন এবং ফিরিয়ে আনুন শৃঙ্খলা।