কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী আর নেই

কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী আর নেই
ডন প্রতিবেদন : কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। শনিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানির পুরান ঢাকায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আলোকচিত্রী কামরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বুলবুল ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে কল দিয়ে জানান বুলবুল ভাই কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ৬ মাস আগে বুলবুল চৌধুরীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। কিন্তু ক্যান্সার তাঁর শ্বাসযন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ষাটের দশকে আবির্ভূত সৃজনশিল কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধিনতা পরবর্তি কথাসাহিত্যে একেবারে নতুন আদলের সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রবেশ করেন বাউল স্বভাবি বলে পরিচিত গুণি কথাকার বুলবুল চৌধুরী। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘টুকা কাহিনী’। আত্মপ্রকাশের শুরুতেই এ গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সাহিত্য জগতে সাড়া ফেলতে সক্ষম হন। প্রান্তিকবাসি মানুষ ও জীবন নিয়ে নিজস্ব ও নতুন এক গদ্য ভাষায় নির্মিত তাঁর এ গ্রন্থ সাহিত্যবোদ্ধাদের চমকে দেয়। তিনি নিজের অধিকাংশ লেখায় গ্রামিণ জিবনকে নানা আঙ্গিকে যেমন উপস্থাপন করেন, তেমনি নগরায়নের জটাজালও তার লেখালেখিতে অনন্য বিচিত্রতায় উঠে আসে। লেখালেখির বাইরে পেশাগত জিবনে বুলবুল চৌধুরী সাংবাদিকতারসঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কাজ করেছেন দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন দৈনিকে। তাঁর প্রকাশিত ছোট গল্পগ্রন্থগুলো হলো ‘টুকা কাহিনী’, ‘পরমানুষ’, ‘মাছের রাত’ ও ‘চৈতার বউ গো’। তাঁর উপন্যাসগুলোর তালিকায় আছে ‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘কহকামিনী’, ‘তিয়াসের লেখন’, ‘অচিনে আঁচড়ি’, ‘মরম বাখানি’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘ইতু বৌদির ঘর’ ও ‘দখিনা বাও’। তাঁর আত্মজৈবনিক দু’টি গ্রন্থের নাম ‘জীবনের আঁকিবুঁকি’ ও ‘অতলের কথকতা’। ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত’ আর ‘প্রাচীন গীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ব্র্যাক ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। সর্বশেষ ভাষা ও সাহিত্যে ২০২১ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।