১৮ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স নভেম্বরে।

১৮ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স নভেম্বরে।
ডন প্রতিবেদন : মহামারিরমধ্যেও ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছিলো প্রবাসী আয়ে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচক বিধ্বস্ত হলেও চাঙ্গা ছিলো রেমিট্যান্স। এক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। ফলে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ৩৬ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির রথ যেনো থেমে গেছে। উল্টো অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। এক্ষেত্রে নভেম্বরে রেমিট্যান্স আহরণ গত দেড় বছরেরমধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে এসেছে। বুধবার (পহেলা ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, সদ্যসমাপ্ত নভেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ (১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ের এ অংক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বা ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার কম। গত বছরের নভেম্বরের রেমিট্যান্স এসেছিলো ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে নভেম্বরের রেমিট্যান্স গত ১৮ মাসেরমধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে দেশে সর্বনিম্ন ১৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য আরও বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স আসে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা), যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার বা প্রায় ২১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১ হাজার ৮৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার অংক ছিলো ৯২ হাজার ৬শ কোটি টাকা। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিলো ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার এবং জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিলো ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, আগস্টে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার এবং জুলাইয়ে এসেছিলো ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিলো। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ১২ মাসেরমধ্যে ৭ মাসেই ২শ কোটি ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরমধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিলো। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতাসহ কর্মহীনতা ও চাকরিচ্যুতির শিকার হয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছেন। ফেরার আগে অনেকেই নিজেদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে দেশে থাকা স্বজনদের জন্য বাড়তি অর্থও পাঠিয়েছেন। যাতায়াত ব্যবস্থায় স্থবিরতার কারণে হুন্ডিসহ অবৈধ পথে অর্থ লেনদেনের পথগুলোও সংকুচিত ছিলো। এসব কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে এসেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে।