ডন প্রতিবেদন : আজ ১৭ আগস্ট। দেশজুড়ে বোমা হামলার ১৬তম বার্ষিকি। ১৬ বছর আগে এইদিনে মুন্সীগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিলো জেএমবি (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ)। ১৬ বছর আগের সেই ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে এখনো ৪১টির বিচার শেষ হয় নি।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। অন্যান্য জঙ্গি হামলার তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও এই ঘটনায় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে জেএমবি। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনি অভিযান শুরু করলে জেএমবি কয়েকটি জেলায় আত্মঘাতি বোমা হামলা চালায়। অবশ্য মাস ছয়েকের মধ্যে জেএমবির সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক অনেকটাই ভেঙে যায়। গ্রেপ্তার হন এর প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমান এবং শির্ষস্থানীয় নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ তখনকার গুরুত্বপূর্ণ সব নেতা। ২০১৭ সালে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইসহ শির্ষ ৫ নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।
তবে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়লেও বিলুপ্ত হয় নি। এরইমধ্যে জেএমবি থেকে একটা অংশ বেরিয়ে আইএস মতাদর্শিদেরসঙ্গে মিলে নতুন জঙ্গি সংগঠন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনি এটাকে বলেছে নব্য জেএমবি। এরা ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনির ব্যাপক অভিযানে নব্য জেএমবির বেশিরভাগ নেতা নিহত বা গ্রেপ্তার হন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জেএমবি ও নব্য জেএমবি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে আছে। এই জঙ্গিদের বড় কোনও হামলা চালানোর সক্ষমতা এখন নেই। যখনই যারা সক্রিয় হয়, তাদের নজরদারিতে এনে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ি, ১৭ আগস্ট বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০২টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তাতে ৩৩৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তাদেরমধ্যে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠাকালিন ১৫ জন নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এসব মামলায় খালাস পেয়েছেন ৩৫৮ জন। সর্বশেষ চারটি মামলার রায় হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। তাতে ১৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান একজন। আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় পুলিশ ইতিপূর্বে ১৬টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।
এখনো বিচারাধিন ৪১টি মামলা। এরমধ্যে ঢাকার আদালতে রয়েছে ৫টি মামলা। বিচার শেষ হতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক দিন আদালত বন্ধ ছিলো। এখন আদালত খুলছে। তবে সাক্ষীর আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন না। বারবার সমন দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে অবশ্য অনেকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এখন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার সাক্ষ্য নিয়ে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ি, ১৭ আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় র্যাব-পুলিশ এ পর্যন্ত ৯৬১ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদেরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ১৩৩ জন।
র্যাব সূত্র জানায়, জেএমবি ছাড়াও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত আছে। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত র্যাব ২ হাজার ৬০০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দেশে এখন জঙ্গি হামলার কোনও ঝুঁকি নেই। জঙ্গি দমনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থারসঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি চলছে নিজস্ব গোয়েন্দা কার্যক্রম।