আন্দোলন জমাতে উসকানি দিতে চায় বিএনপি : কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি তাঁদের আন্দোলন জমাতে উসকানি দিতে চায়। আজ শনিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা উসকানি দিয়ে লাশ ফেলতে চাইলে সরকার দায়ী থাকবে না। তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেবো না।’
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০১৩-১৪-এর মতো সহিংসতা করতে চাইলে, তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। এ মন্ত্রণালয়ের কোথাও দুর্নীতিবাজ থাকতে পারবে না। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করুক, কেনো তদন্ত করে না। যেখানে দুর্নীতি হয়, সেখানে তদন্ত করতেই হবে। আমি সবাইকে বলছি, কাজ করুন। দুর্ঘটনা-যানজট কমান।’
তিনি বলেন, ‘আইন করেছি, তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে চলবে না, কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমি এক পথে যাই, খবর পাই, তখন সব ক্লিন। আবার আমি যখন রাস্তা অতিক্রম করি, আবার সেই পুরোনো চিত্র।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ঘটনার সংখ্যা আগের চেয়ে কমলেও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার আগের চেয়ে বাড়ছে। এটা হলো বাস্তবতা, অস্বীকার করে লাভ নেই। আজ এতো স্থাপনা সারা বাংলাদেশে, এত আন্ডারপাস, ওভারপাস,মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, টানেল সবই হচ্ছে। তারপরও শৃঙ্খলা কেনো নেই? শৃঙ্খলা না থাকলে সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। উন্নয়নের অবকাঠামো, এতো সাফল্য, সব ম্লান হয়ে যাবে, যদি আমরা সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারি।’
জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাস্তায় তিন চাকার গাড়ি বন্ধ করেছি। আমি যখন খবর নিই, বলে যে অমুক জনপ্রতিনিধি গাড়ি চলতে দিয়েছেন। কেনো চলবে? উনার কোনও স্বার্থ আছে। কেনো চলবে? সামনে ভোট আছে। জীবন আগে না জীবিকা আগে? জীবন তো বাঁচাতে হবে। জীবন না বাঁচলে জীবিকা দিয়ে কী হবে!’ তিনি বলেন, ‘আমি বুকে হাত দিয়ে বলবো, ৫ বছর আগে ছিলাম প্রতিমন্ত্রী, এবার ১১ বছর হয়ে গেলো। কোনো পারসেন্টেজ, কোনও কমিশন কখনো নিই নি।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তা করি, বৃষ্টি হলে রাস্তা নেই, টাকা কোথায় যায়। এ টাকা সরকারের টাকা, জনগণের ট্যাক্সের টাকা। সচিব সাহেব, এই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতিবাজ থাকবে না, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করুক। যেখানে দুর্নীতি হয়, সেখানে তদন্ত করতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো সৎ নেতা চাই। তাঁর মতো সততা, ভালো মানুষ পঁচাত্তরের পরে একজনও আসেন নি। কজন জনপ্রতিনিধি জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন, কজন পকেটের উন্নয়ন করেন, সে হিসাব দিতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে সৎ থাকবেন, অন্যরা পকেটের উন্নয়ন করবেন, সেটা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘গতবারের প্রত্যাশা ছিলো দুর্ঘটনা, যানজট ও মোটরসাইকেলের উপদ্রব কমানোর। এই ঢাকা শহরে এখন আর হেলমেট ছাড়া কোনও যাত্রী দেখি না, রাস্তায় যাঁরা হেলমেট ছাড়া চলেন, তাঁরা পলিটিকসের লোক। পলিটিকস ঠিক না হলে কিছু ঠিক হবে না।’
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের অসুবিধা করে রং সাইডে যাবেন, আপনি কী নেতা, কেমন রাজনীতিবিদ? আপনাদের দিয়ে জনগণের কী কাজে আসবে?’ তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা না থাকলে সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হবে। আগের সচিবকেও বলেছি, এসব নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। নীতিমালা করলে হবে না, নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম খারাপ হতে চলেছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান বলেন, নিরাপদ সড়ক দিবস আরও কয়েক দিন ধরে পালন প্রয়োজন, যাতে শ্রমিকেরা জানতে পারেন, সচেতন হতে পানরে। মিশুক মনির নিহত হওয়ার দিন, চট্টগ্রাম ৪৫ ছাত্রের মৃত্যুর দিন, সচিব রাজিয়া দুর্ঘটনায় নিহতের দিনগুলোতে নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করতে হবে। খুলনায় বিএনপির সমাবেশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা নিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক ফেডারেশন কখনো ধর্মঘট ডাকে না। গত ১২ বছরে ডাকে নি। এটা বিএনপি এক সময় শুরু করেছিলো।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এবং নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ বক্তব্য দেন।