বেলাবতে লালনের আখড়ায় হামলা : বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর

বেলাবতে লালনের আখড়ায় হামলা : বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; বেলাব (নরসিংদী) : নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নে লালন সংগীতের আখড়াবাড়ি পুলকিত আশ্রমের সাধুসঙ্গে হামলা এবং বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৭ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন বাউল শিল্পী আহত হয়েছেন। সোমবার (৮ মে) এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল নিন্দা জানাচ্ছেন বিশিষ্টজনেরা।

আশ্রমের বাউলেরা জানান, সোমবার পুলকিত আশ্রমে সাধুসঙ্গের দিন ধার্য ছিলো। সে উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধু-ফকির, বাউল শিল্পীরা আগে থেকেই আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন। রোববার দুপুরে শেখ জাহাঙ্গীর এবং শাহীনের নেতৃত্বে ৫ থেকে ৬ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসহ জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়াকে খুঁজতে আশ্রমে আসেন। জাহাঙ্গীরকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা আশ্রমে হামলা শুরু করলে তাদের বাধা দেন বাউল শিল্পীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আগত শিল্পীদের ওপর হামলা চালায় তারা। এ সময় কুষ্টিয়া থেকে আসা লালন শিল্পী রিয়াদ ভূঁইয়া, মিন্টু ফকির ও রাকিব ফকির আহত হয়েছেন। এমনকি তাদের সঙ্গে থাকা তনপুরা, দোতারাসহ সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে লালন সংগীতকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করছেন কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লালন শিল্পীরা। তাঁরা বাঙলার কাগজকে বলেন, হামলাকারী কাউকে আমরা চিনি না। আমরা এখানে গান করছিলাম। হঠাৎ তারা এসে আমাদের মারধর করেন এবং আমাদের যন্ত্র ভেঙে দেন। আমরা এর বিচার চাই।

সাধু রিয়াদ ভূঁইয়া বাঙলার কাগজকে বলেন, আমরা এখানে সাধুরা আসি। গান করি। লালনের চর্চা করি। রোববার দুপুরে হঠাৎ করে আমাদের আখড়ায় হামলা করে স্থানীয় জাহাঙ্গীর শেখসহ বেশ কয়েকজন। আমরা এই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। 

পুলকিত আশ্রমের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বাঙলার কাগজকে বলেন, বেলাব বাজারের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া লালন ভক্ত ছিলেন। তিনি গত ৪০ দিন আগে মারা যান। তার স্মরণে আমরা আখরায় মিলাদ ও ভক্তিমূলক গানের আয়োজন করি। এখানে ঢাকা, কুষ্টিয়া, খুলনা ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লালন শিল্পী ও সাধুরা আসেন। রোববার দুপুরে মদ খেয়ে পাশ্ববর্তী শেখ বাড়ির মজনু শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর শেখ আখড়ায় জোর করে প্রবেশ করে এবং শিল্পীদের সঙ্গে মাতলামো করেন। পরে শাহিন শেখ, ফজলু শেখ জাহাঙ্গীর শেখ, পলক শেখ, শরিফ শেখসহ আরও কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আখড়ায় হামলা করে।

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা শতবর্ষী পুরানো একটি সেতারা, একটি দোতারা, চারটি তবলা, দুইটি ডুগি, একটি ইউকেলেলে, একটি ডুগলী, বেশ কয়েকটি বাঁশিসহ অনেকগুলো বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা তিনটি মোবাইল ফোনসহ প্রায় ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

অভিযুক্ত শাহীন শেখ বলেন, জাহাঙ্গীরকে আখড়ার লোকেরা প্রথমে মারধর করে আখড়া থেকে বের করে দেয়। বাড়িতে এসে জাহাঙ্গীর এ খবর আমাদের জানালে আমরা সেখানে যাই। আমাদের দেখে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমরা তাদের বাদ্যযন্ত্র ভাঙি নি। বরং আখড়ার সাধুরাই নেশা করে ভাঙচুর করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। 

পাটুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফরানুল হক ভূঁইয়া জামান বাঙলার কাগজকে বলেন, ঘটনা শুনে আমি আশ্রম পরিদর্শন করেছি। যারা এ কাজ করেছে, তারা ভালো করে নি। আমরা সামাজিকভাবে বসে এ ঘটনার সমাধান করবো। 

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বাঙলার কাগজকে বলেন, এ ঘটনায় এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করে নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।