ধলেশ্বরীর পাড়ে ৩ দিন। শোক এখন ক্ষোভ।

ধলেশ্বরীর পাড়ে ৩ দিন। শোক এখন ক্ষোভ।
ডন প্রতিবেদন : ছেলের খোঁজে তিনদিন ধরে ধলেশ্বরীর পাড়ে অপেক্ষায় বসে আছেন শান্তা বেগম। দুদিন ধরে অনবরত কাঁদছিলেন, তবে শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) তাঁর চোখে-মুখে দেখা গেছে ক্ষোভ। ছেলেকে তিন দিনেও কেউ উদ্ধার করে দেয় নি বলে ক্ষুব্ধ বাবা মো. রাজুও। বাঙলা কাগজ এবং ডনকে রাজু জানান, সাব্বির হোসেন তাদের একমাত্র সন্তান; পড়তেন নারায়ণগঞ্জ কর্মাস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে। কলেজ থেকে ক্লাস পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে বুধবার সকালে বক্তাবলীর মধ্যনগর থেকে ট্রলারে করে ধলেশ্বরী পাড়ি দিচ্ছিলেন সাব্বির। তাঁকেসহ অন্তত ৩০ যাত্রী বহনকারী ওই ট্রলারটি বুধবার সকালে এমভি ফারহান-৬ নামের লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় নদীতে। বেশিরভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও তিনদিন ধরে নিখোঁজ সাব্বিরসহ ১০ জন। বুধবার থেকেই ধলেশ্বরীর তীরে ওই ১০ জনের খোঁজে অপেক্ষায় আছেন তাঁদের স্বজনরা। রাজু বলেন, ‘তিন দিন পার হইয়া যাইছে, তাঁরা (উদ্ধারকারীরা) এখনও একটা মানুষের খোঁজ বের করতে পারলো না। তাঁরা কীসের অভিযান করতাছে? আমি আমার পোলা চাই।’ নদীর তীরে অপেক্ষায় থাকা আব্দুর রহমানেরসঙ্গে কথা হয় বাঙলা কাগজ এবং ডনের সঙ্গে। তিনি এসেছেন ফতুল্লা থেকে, খুঁজছেন চাচি জিয়াসমিন আক্তার, চাচাতো বোন তাসনিম আক্তার এবং তাসনিমের স্কুলপড়ুয়া ছেলে ও দেড় বছরের মেয়েকে। তাঁরাও ছিলেন ডুবে যাওয়া ট্রলারে। রহমান জানান, তাঁর চাচা শফিকুল ইসলাম সোহেল ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন কুড়িগ্রামে। চাচি মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ট্রলারে করে বোনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ট্রলারডুবির খবর পেয়ে সোহেল নদীর তীরে পৌঁছান বুধবার রাতে। শোকে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন বলে তাঁকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। পরিবারের চার সদস্যের খোঁজে তাই তিনিই তীরে অপেক্ষায় আছেন। রহমান বলেন, ‘ট্রলারে যখন লঞ্চ ধাক্কা দেয়, তখন চাচি তাঁর বোনকে মোবাইলে কল দিয়ে জানাইছে। চাচি চিৎকার করে বলতেছিল যে ট্রলার ডুইবা যাইতাছে। এরপর আমরা নদীর তীরে গিয়ে দেখি লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবছে।’ ‘বড় বড় নদীতে লঞ্চ ডুবে যায়, সেখানে দ্রুত সবকিছু হয়ে যায়, কিন্তু এখানে তাঁরা কিছুই করতে পারছে না। আমগো পরিবারের চারজন মানুষ এখনও নিখোঁজ। দুই দিন পার হয়ে যাইতাছে, কিন্তু তাঁরা সন্ধান করতে পারতাছে না। তাহলে কী উদ্ধার অভিযান করতাছে। আমাগো পরিবারের সদস্যগো জীবিত বা মৃত হোক আমরা তাদের চাই।’ ট্রলারডুবির পর থেকেই নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযানে আছে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টাগার্ড। শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) রাত ৮টা পর্যন্ত ওই ১০ জনের কাউকেই উদ্ধার করা যায় নি। নিখোঁজ অন্যরা হলেন বক্তবলীর উত্তর গোপালনগর এলাকার মোতালেব মিয়া, চরবক্তবলীর আওলাদ হোসেন, একই এলাকার মো. আব্দুল্লাহ, মো. শামসুদ্দিন ও জোসনা বেগম। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল হালিম জানান, নদীর গভীরতা বেশি। এ কারণে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি এখনও শনাক্ত করা যায় নি। নিখোঁজদেরও পাওয়া যায় নি। উদ্ধারকাজে তৃতীয় দিন নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, নদীর তলদেশ ও দুই পাশের অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরইমধ্যে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসান, চালক জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া ও সুকানি জসিম মোল্লাকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা করেছেন বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (নৌ নিরাপত্তা বিভাগ) বাবু লাল বৈদ্য। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জব্দ করা হয়েছে লঞ্চটিও। ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম বাঙলা কাগজ এবং ডনকে জানান, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে কুয়াশার মধ্যে বেপরোয়া গতিতে লঞ্চটি চলছিলো। এ কারণে এই দুর্ঘটনা হয়।