মামুনকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে দুদকের মামলায় শফিক

মামুনকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে দুদকের মামলায় শফিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; রনি রেজা : বেসরকারি খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিকুর রহমানের দুর্নীতির ফিরিস্তি অনেক। তিনি শুধু এসআইবিএলেই জালিয়াতির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না; বরং চাকরির প্রথম থেকেই জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতিতে। এমনকি তিনি ডিএমডি (উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক) হওয়ার আগে জিএম (মহাব্যবস্থাপক) থাকা অবস্থায়ও জালিয়াতি করেছেন; সুবিধা দিয়েছেন বিএনপিকে। এরই অংশ হিসেবে তিনি এসআইবিএলে যোগদানের আগে যখন সোনালী ব্যাংকের জিএম ছিলেন, তখন দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ওয়ান স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছিলেন। যেখানে সোনালী ব্যাংকের অর্থ লোপাট করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ৩২ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন। অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুদক জানিয়েছে, ২০০৪ সালের ৪ নভেম্বর মেসার্স ওয়ান স্পিনিং মিলস লিমিটেড মালিকপক্ষ ও সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে জামানত ছাড়াই ঋণপত্ৰ খুলে, ঋণপত্রের শর্ত না মেনে এলএটিআর (বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঋণ)  সৃষ্টি করে ৩২ কেটি ৬৭ লাখ ৯৪ হাজার ৬১২ টাকার মেশিনারিজ আমদানি করেন। কিন্তু পরে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করে তা আত্মসাৎ করেন।

আরও জানা গেছে, অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক তথা রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন : ওয়ান স্পিনিং মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন মিয়া, এ এইচ এম জাহাঙ্গীর ওরফে আবু হাসান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পরিচালক রাজিব সিরাজ ও ওরিয়ন মাশরুম লিমিটেডের পরিচালক জি আর চৌধুরী ওরফে গোলাম রব্বানী চৌধুরী।

অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তারা হলেন : ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহম্মদ তাহমিলুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিজিএম) মো. আমানুল্লাহ, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শফিকুর রহমান এবং সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মিজানুর রহমান।

পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের শিল্পঋণ বিভাগের (স্থানীয় কার্যালয়) সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোশারফ আলী ও সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্থানীয় কার্যালয়) মো. কামরুল ইসলামকেও আসামী করা হয়েছে।

এ ছাড়া বৈদেশিক বিনিময় বিভাগের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আবু জাফর মো. সালেহ, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আলী আরশাদ, বৈদেশিক বিনিময় বিভাগের সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আবু মুসা ও আব্দুল গফুর ভুঁইয়া, সোনালী ব্যাংকের (স্থানীয় কার্যালয়) সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আতিকুর রহমান ও এস এম এম আওলাদ হোসেন, বৈদেশিক বিনিময় বিভাগের সাবেক সহকারী প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আব্দুর রাজ্জাক, বৈদেশিক বিনিময় বিভাগের সাবেক সিনিয়র সহকারী প্রিন্সিপার অফিসার ওয়াহিদ উদ্দিন আহম্মদ ও বৈদেশিক বিনিময় বিভাগের সাবেক সিনিয়র অফিসার (এফএ) মো. শাহ আলমও এই মামলায় অভিযুক্ত।

তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। তবে মায়ের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চার ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্ত হয়েছিলেন।

চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে মামুনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে এক মামলায় ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ মামুনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করেন আদালত।

এদিকে সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় এসআইবিএলের সাবেক এমডি শফিকুর রহমানসহ অন্যান্যদের নামে গত ১৫ জুন দুদক সমন্বিত কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থার উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত। এর আগের দিন এ মামলার অনুমোদন দেয় দুদক।

অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে এসআইবিএলের সাবেক এমডি শফিকুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।