কক্সবাজারে ৬ ভাইয়ের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনা নয়; জামায়াতের হত্যাকাণ্ড!

কক্সবাজারে ৬ ভাইয়ের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনা নয়; জামায়াতের হত্যাকাণ্ড!
ডন প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে জামায়াতের লোকজন কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ৬ ভাইকে মেরে ফেলেছে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। একইসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, এটি শতভাগ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। নিহতদের পরিবারের পক্ষে নিকটাত্মীয় অ্যাডভোকেট রঘু মণিসহ কয়েকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া মালুমঘাট এলাকায় একটি পিকআপ একই পরিবারের আটজনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই ৪ ভাই মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন : অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৪)। গত ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান আরেক ভাই রক্তিম সুশীল (২৮)। একই ঘটনায় আহত হয়ে মালুমঘাট ক্রিশ্চিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁদের বোন হীরা সুশীল। আরেক ভাই প্লাবন সুশীলও সামান্য আহত হন। চোখের সামনে ভাইদের মৃত্যু দেখে প্লাবন এখন মানসিক ভারসাম্য হারানোর অবস্থায় আছেন বলেই জানিয়েছে তাঁর পরিবার। আর ওই সড়ক দুর্ঘটনার দশদিন আগে মারা যান তাঁদের বাবা সুরেন্দ্র সুশীল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঘটনার ১১ দিন আগে গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের সদস্য রফিক বাহিনীর সর্দার এমরান ও তাঁর দল সুরেন্দ্র সুশীলের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তারা সুরেন্দ্র’র ছেলে চম্পককে মারধর করে এবং হুমকি দেয়। বলে, এলাকায় মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করলে ‘সবাইকে ওপরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে’। একইদিন মধ্যরাতে আবারও এমরানের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন সন্ত্রাসী তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়, সুরেন্দ্রকে এলোপাতাড়ি লাথি মারে এবং চম্পক ও প্লাবনকে মারধর করে। মন্দির নির্মাণ করা হলে বসতঘর থেকে উচ্ছেদের হুমকিও দেয় তারা। হামলায় সুরেন্দ্র’র শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু রফিক বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেওয়ায় সুরেন্দ্রকে হাসপাতালে নেওয়া যায় নি। পরে ৩০ জানুয়ারি তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি। এরপর প্রয়াত বাবার পারলৌকিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ৭ ভাই ও ২ বোন বাড়িতে ফেরার পথে পিকআপ তাঁদের চাপা দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ ‘গুরুতর অপরাধকে লঘু দেখিয়ে’ মামলা নিয়েছে বলেই অভিযোগ করেছেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে ভাইদের মৃত্যু দেখে উন্মাদপ্রায় প্লাবন সুশীল। অথচ পুলিশ বলছে, তিনি (প্লাবন) নাকি ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে চকরিয়া থানায় হাজির হয়ে এজাহার দিয়েছেন, যেখানে তিনি তাঁর ভাইদের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে, উল্লেখ করে মৃতদেহ বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তরের জন্য নাকি আবেদন করেছেন। ‘অথচ প্লাবনের কাকা সন্তোষ সুশীল আমাদের বলেছেন, এজাহারটি হাইওয়ে পুলিশের নিজেদের লেখা। সেখানে কী লেখা আছে, সেটা তাঁদের পড়তে দেওয়া হয় নি। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরের আবেদন প্লাবন করে নি।’ এ ছাড়া ঘটনা ভোর ৬টা থেকে সোয়া ৬টারমধ্যে দিনের আলোতে হলেও এজাহারে সেটা ভোর ৫টায় অন্ধকারে ঘটেছে বলে উল্লেখ আছে, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কেনো ও কোন উদ্দেশে, কাদের প্ররোচনায়, কাদের মামলা থেকে বাঁচানোর বদ উদ্দেশে গুরু অপরাধের মামলা লঘু অপরাধের মামলা হিসেবে দায়েরের অপকর্ম পুলিশ করেছে, সেটা তদন্ত করে বের করা হোক।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ৫ ভাইয়ের মৃত্যুর পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উজ্জ্বল সুশীল নামে তাঁদের এক আত্মীয়কে ‘জামায়াতে ইসলামীর লোক’ পরিচয়ে মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে তিনটি অডিও ভয়েস ক্লিপ পাঠান। এতে ‘আল্লাহর হুকুমে মৃত্যু হয়েছে’ উল্লেখ করে ‘ঘটনাকে রটনা না বানানোর’ হুমকি দেওয়া হয়। রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমি নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে সবারসঙ্গে কথাবার্তা বলে আমি যা বুঝেছি, ঘটনার পেছনে ঘটনা আছে। ঘটনার আগে হুমকি আছে। হামলাও আছে। আবার অডিও ক্লিপ পাঠিয়েও হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবার তো কোনও সংগঠন বা ব্যক্তির নাম কখনও বলে নি। তাহলে একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের (জামায়াতে ইসলামী) নাম উল্লেখ করে কেনো তাদের বলতে গেল যে, আমরা না, আমরা এ কাজ করি নি। আমি আরও জানতে পেরেছি, পিকআপটি নাকি তাদের দুইবার চাপা দিয়েছিলো। সব দেখে মনে হয়েছে এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়।’ ‘আমরা বলতে চাই, একই পরিবারের ৭ জনকে একইসঙ্গে গাড়িচাপা দেওয়া কোনও দুর্ঘটনা নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’ হামলার ঘটনার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে নিহতদের পিসতুতো ভাই আইনজীবী রঘু মণি বলেন, ‘হামলার পর ঘর থেকেই বের হতে দেয় নি।’ ‘এ ছাড়া এক সপ্তাহেরমধ্যে সামাজিকভাবে মীমাংসার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিলো। এজন্য তাঁদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় নি।’ ‘এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে করেন কি-না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে মনে হচ্ছে, এটি শতভাগ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’ মামলাটির বর্তমান তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে নির্মোহ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের নেতা পরিমল চৌধুরী, তাপস হোড়, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, শ্যামল কুমার পালিত, রুবেল পাল এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।