ডন প্রতিবেদন : নতুন ডেটা সেন্টার ও পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের কারণে বন্ধ আছে ই-পাসপোর্টের অনলাইন পোর্টাল। পোর্টালটির সার্ভার ডাউন থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকাল নাগাদ ই-পাসপোর্টের পোর্টাল চালু হয়ে যাবে।
আজ সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সামনে তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ই-পাসপোর্টের কাজ করতে কেন্দ্রের সামনে লোকজনের ভিড়। তাঁরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। সার্ভার বন্ধ বলে সবাইকে ফেরত যেতে হয়। যাওয়ার সময় কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সমালোচনা করেন।
১৯ বছর বয়সী মাশরাফি রাহীম শেখ রাজধানীর বনশ্রী থেকে এসেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব দ্য পিপলের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, আগামী জুন মাসে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা। পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয় পাসপোর্ট জমা দিতে বলেছে। মাশরাফি বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘পাসপোর্টের সার্ভার ডাউন দেখাচ্ছে। সার্ভার ডাউনের জন্য শিডিউল পেজ ডাউনলোড করা যাচ্ছে না। আমরা সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে জুন মাসের ২ তারিখের মধ্যে। এত কষ্ট করে এলাম। কোনো কাজ হলো না।’
এর আগে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম ঘোষণা দিয়ে বন্ধ ছিল। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অধীনে ডিজাস্টার রিকভারি সাইটে (ডিআরএস) ওএটি এবং ফেইল ওভার টেস্ট সম্পাদনের কারণে ওই দুই দিন সব বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ১৭ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যায় নি। পাঁচ দিন পর গত রোববার ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হয়। কিন্তু এ সেবা কার্যক্রম শুরুর দুই ঘণ্টা পর আবার ডাউন হয়ে যায় সার্ভার। সেদিনও ই-পাসপোর্টের সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢুকে দেখা যায়, ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইটে ‘এই অনলাইন পোর্টালটি বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে’ লেখা উঠছে। সার্ভারের কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে ই-পাসপোর্টের সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়।
শেওড়াপাড়া থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী মো. নাদিমুল ইসলাম। তিনি বেলা দুইটার দিকে এসেছেন। এসে তথ্য ও অনুসন্ধানকেন্দ্র থেকে জানতে পারেন, সার্ভার চালু হয়েছে। তবে মুঠোফোনে তিনি দেখতে পান, ‘সার্ভার ডাউন’।
নাদিমুল বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘১৫ মার্চ থেকে সার্ভার বন্ধ। গতকাল ২০ মার্চ আমার কাজটি করার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। গতকাল এসেছি, আজও এসেছি। কাজ হলো না। আমার পাসপোর্ট এমআরপি ছিল, এখন ই-পাসপোর্ট করাব। চিকিৎসার জন্য ভারতে যাব, হৃদ্রোগের জটিলতা আছে। কিন্তু এভাবে কত দিন ঘুরতে হবে কে জানে।’
মগবাজার থেকে পাসপোর্টের কাজ করতে এসেছেন ফাহিমা এলাহী । তিনি বলেন, ‘১৫ মার্চ থেকে সার্ভার অফ আছে। এখানে তথ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারে না। আজ ২১ মার্চ, এখনো সার্ভার চালু হয়নি। সার্ভার বন্ধ, সেটা আমি জানতাম। ভেবেছি প্রিন্ট করা কাগজগুলোতেই কাজ হবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, সার্ভার চালু না হলে কিছুই হচ্ছে না।’
ফাহিমা বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমি বেলা ১১টায় এসেছি। এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম, ভেবেছি হয়তো কাজ হয়ে যাবে, যেকোনো সময় সার্ভার চালু হবে। কিন্তু আমি হতাশ। আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রিনিউ করতে এসেছি।’
ই-পাসপোর্ট হচ্ছে একটি অনলাইন বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যেখানে একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ও অ্যানটেনা রয়েছে। এ চিপের মধ্যে বায়োমেট্রিক তথ্য বা পাসপোর্টধারীর পরিচয় সংরক্ষিত থাকে।
২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন প্রায় ৩৩ লাখ লোক। এর মধ্যে ২৬ লাখ ২২ হাজার ৩০০ জন ই-পাসপোর্ট পেয়েছেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ই-পাসপোর্টের জন্য ঢাকা ও যশোরে সার্ভার রয়েছে। ঢাকার সার্ভারটি প্রাইমারি এবং যশোরেরটি সেকেন্ডারি। ঢাকার সার্ভারে কোনো জটিলতা হলে যশোরের সার্ভারটি থেকে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার সার্ভার ব্যবহার করা হলেও যশোরের সার্ভারে কার্যক্রম যাচাইয়ে পরীক্ষামূলক চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোনো দুর্যোগে সার্ভার বিচ্ছিন্ন হলে সেটির পুনরুদ্ধারে কাজ করে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট, যা যশোরে আছে। এই সাইটের ফেইল ওভার, মানে অকার্যকর হওয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করতে অপারেশনাল এক্সেপটেন্স টেস্টিংয়ে (ওএটি) সক্ষমতা যাচাইয়ের পরীক্ষা করা হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘পোর্টালে কিছু কাজ চলছে। এ কারণে সাময়িকভাবে ওয়েবসাইটটি বন্ধ আছে। টেকনিক্যাল বিষয় আমি বলতে পারব না। আমি অপারেশনাল অংশে কাজ করি।’ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ই-পাসপোর্ট অ্যান্ড অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ঢাকার সার্ভার অফ করে যশোরেরটি চালু করায় কিছু কানেকটিভিটি ডাউন হয়েছে। ফলে ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যাচ্ছে না। তবে বাকি কার্যক্রম চলছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গতকাল রবিবার বিকেল থেকে সার্ভার বন্ধ আছে। কিছু সমস্যা হচ্ছে। রিকভার করা হচ্ছে। আগামীকাল সকাল নাগাদ ই-পাসপোর্টের পোর্টাল চালু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।