৪ জলদস্যু গ্রেপ্তার করেছে নৌ পুলিশ।

৪ জলদস্যু গ্রেপ্তার করেছে নৌ পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : করিমপুর নৌ পুলিশ  ফাঁড়িতে সংবাদ আসে যে, জনাব আসমত আলি (৫০), পিতা : মৃত জনাব গনি মিয়া, গ্রাম : নেকজানপুর উত্তর পাড়া, থানা ও জেলা : নরসিংদী প্রায় ৯ বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী তাঁর ছোট ভাই জনাব নাসির উদ্দিনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মেঘনা নদীতে দস্যুতার শিকার হন। গত ৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

ছোট ভাই জনাব নাসির উদ্দিনকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় ভাই জনাব আসমত আলী আগে থেকেই তোয়াজ-৪০ নামে একটি স্পিডবোট ভাড়া করে রাখেন। বিমানবন্দর থেকে জনাব আসমত আলী তাঁর ভাতিজা জনাব দলিল (১৭) এবং ছেলে জনাব রিফাতসহ (৭) ছোটভাই জনাব নাসির উদ্দিনকে নিয়ে একটি  মাইক্রোবাস ভাড়া করে নরসিংদী পুরাতন লঞ্চঘাটে পৌঁছান। সেখানে আগে থেকে ঠিক করে রাখা তোয়াজ-৪০ নামের ওই স্পিডবোটযোগে বাড়ির উদ্দেশে রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ এর দিকে রওয়ানা করেন। কিন্তু স্পিডবোট চালক জনাব মো. শফিকুল ইসলাম তাঁদেরকে নিয়ে কিছুদূর যাবার পর হতেই ইঞ্জিন স্টার্ট হচ্ছে না বলে মাঝনদীতে স্পিডবোট চালানো বন্ধ করে দেন এবং তাঁর মোবাইল ফোন হতে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই অন্য একটি স্পিডবোট এর মাধ্যমে ৩ জন জলদস্যু জনাব আসমত আলীর বোটে উঠে তাঁদের আঘাত করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তাঁদের সঙ্গে থাকা মালামাল নিয়ে যান। ওই ঘটনা করিমপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে জলদস্যুদের ধরার জন্য অভিযানে  নামে। নৌ পুলিশ সদস্যরা স্পিডবোট তোয়াজ-৪০ এর চালক জনাব শফিকুল ইসলামকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তিনি এই দস্যুতা সংঘটনে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন এবং তাঁর সহযোগীদের নাম প্রকাশ করেন। এরই সূত্র ধরে ঢাকার নৌ পুলিশের একটি চৌকস দল প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তাঁর সহযোগী জনাব রাহাত হোসেনকে নরসিংদী দত্তপাড়া এলাকা থেকে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সরকার পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন ওসমান গনি মার্কেটের লেপ তোষকের দোকান থেকে সহযোগী জনাব মো. ইসমাইল হোসেন ও জনাব রিজভীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের নিকট থেকে সোনার চেইন ২টি, কানের দুল ১ জোড়া, আংটি- ১টি, রুপার ব্রেসলেট- ১টি, VIVO মোবাইল- ১টি, SAMSUNG মোবাইল- ১টি, HUAWEI মোবাইল- ১টি,গ্যালাক্সি ট্যাব- ১টি, হাতঘড়ি- ২টি, স্পিডবোট- ২টি, নগদ ৫ হাজার টাকা, ইরানী ১০ হাজার রিয়াল নোট, মালয়েশিয়ান ১০ রিঙ্গিত নোট, ভিয়েতনামের ৫০ হাজার ডং নোট, ১ হাজার ডং নোট- ৬টি, ১০ হাজার ডং নোট- ২টি, ৫ হাজার ডং নোট- ৪টি, ২ শ ডং নোট- ১টি, সিঙ্গাপুরের ১০ ডলার নোট- ১টি, তুরস্কের ১০ লিরা নোট- ১টি জব্দ করা হয়।

নরসিংদী মডেল থানায় ধৃত আসামী ১) জনাব মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে বাডি (২০), পিতা : মো. শরিফ, মাতা : জনাবা মোছা. আছমা বেগম, গ্রাম : মরিছাকান্দি, পোস্ট অফিস : বাঞ্ছারামপুর, থানা ও জেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া; ২) জনাব রাহাত হোসেন (২১), পিতা : জনাব মো. আনোয়ার হোসেন; ৩) জনাব ইসমাইল হোসেন (২২), পিতা : জনাব মো. সাদেক মিয়া, মাতা : জনাবা নাসিমা বেগম, উভয়ের গ্রাম : পূর্ব দত্তপাড়া, থানা ও জেলা : নরসিংদী; ৪) জনাব রিজভি মিয়া (২০), পিতা : জনাব মো. বিল্লাল মিয়া, মাতা : জনাবা অ্যানি বেগম, গ্রাম : আলোকবালি, বর্তমান গ্রাম : পূর্ব দত্ত পাড়া, থানা ও জেলা : নরসিংদীর বিরুদ্ধে মামলা নম্বর : ১৩, তারিখ : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ; ধারা-৩৯৪/১২০-(ক)/৪১১ দণ্ডবিধির মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নৌপথে দস্যুতাকালে গৃহীত তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে লুণ্ঠিত মালামালসহ আসামী গ্রেপ্তার করায় অভিযোগকারীর পরিবারসহ নরসিংদীর স্থানীয় জনগণ নৌ পুলিশের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে।

অভিযান পরিচালনা প্রসঙ্গে নৌ পুলিশ প্রধান এবং বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি জনাব মো. শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, ‘নৌপথ অপরাধমুক্ত রাখতে ও নৌ যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে নৌ পুলিশ কাজ করছে। নৌ পুলিশ তার কাজের মাধ্যমে প্রবাসী জনাব নাসির উদ্দিনের মতো নৌপথ ব্যবহারকারী সকলের কাছেই আজ অত্যন্ত নির্ভরতার জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।’ তিনি নৌপথ অপরাধমুক্ত রাখতে নৌ পুলিশের এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেই জানান।

সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) নৌ পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম এন্ড অপস) জনাব পংকজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাবা সাথী রানী শর্মা উপস্থিত ছিলেন।