প্রধানমন্ত্রী : মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীর আত্মত্যাগের কথা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।

প্রধানমন্ত্রী : মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীর আত্মত্যাগের কথা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীর আত্মত্যাগের কথা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।

প্রধানমন্ত্রী ভারতে অবস্থানকালীন হোটেলের বলরুমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বা গুরুতর আহত ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক বা কর্মকর্তাদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২ শটি মুজিব স্কলারশিপ, দশম শ্রেণীতে ১ শটি এবং দ্বাদশ শ্রেণির স্তরে ১ শটি- যুদ্ধের ভারতীয় প্রবীণ সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁদের বংশধরদের জন্য আমাদের এই শুভেচ্ছা উপহার; যাঁরা আমাদের জন্য ১৯৭১ সালে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভারতীয় ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং রক্ত দিয়েছেন। যাঁরা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্মরণ করা আমাদের জন্য সর্বদা গর্বের বিষয়। আপনাদের আমার অভিবাদন।’ 

‘হে, সাহসী হৃদয়। আমাদের বীরদের!’

শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মহান পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী, তাই তরুণ প্রজন্মকে সেই ঐতিহাসিক অতীতের সঙ্গে পুনরায় সংযুক্ত করার জন্য আমাদের এই বিনীত প্রচেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃত্তিপ্রাপ্তরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের স্মৃতি পুনরায় ঘুরে দেখার, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুত্বের পথ অতিক্রম করছে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণ জয়ন্তীর ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ২০২১ সাল আমাদের সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী বছর ছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী ছিলো ওই বছর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে এবং গত এক দশকে তা আরও জোরদার হয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পর উভয় দেশই ক্রমবর্ধমান বিস্তৃত সেক্টরাল সহযোগিতায় কাজ করছে।

সামুদ্রিক ও স্থল সীমানা নির্ধারণের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান সেই প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কটি বিশ্বব্যাপী ‘প্রতিবেশি কূটনীতির জন্য রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আরও স্মরণ করেন যে, ভারতের রাষ্ট্রপতি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আমাদের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনে যোগ দিয়েছিলেন।

এসব উপলক্ষ উদ্‌যাপনে বেশকিছু যৌথ কর্মসূচির আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী ইত্যাদি। 

এ ছাড়া ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলাদেশের কন্টিনজেন্টের অংশগ্রহণ ছিলো লক্ষণীয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণাধীন বায়োপিক ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব দ্য নেশন’ এর কাজ চলছে এবং শিগগিরই মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

“‘বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে ৬ ডিসেম্বরকে “মৈত্রী দিবস” হিসেবে উদ্‌যাপন করছে, যে দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন; যখন ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়,’” উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই যৌথ উদ্‌যাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ভালো প্রতিবেশিকে তুলে ধরেছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সম্মান জানাতে বাংলাদেশ সরকার একটি কর্মসূচি শুরু করেছে। 

তিনি বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান যে, ২০১১ সালে প্রথম সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠান করতে পেরেছিলাম; যখন বিদেশি বন্ধুদের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘বাংলাদেশ ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড’ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া হয়েছিলো। পরবর্তীকালে ভারতের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জীসহ ভারতীয় নেতাদের আরও পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিলো।

‘যুদ্ধের নায়ক এবং ভারতের নাগরিক সমাজের সদস্যদেরও পর্যায়ক্রমে সম্মানিত করা হয়েছিলো’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোট ৩৪০ জন বিদেশি নাগরিক এবং সংস্থাকে সম্মানিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২২৬ জনই ভারতের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিলে আমি নয়াদিল্লিতে মোদিজির উপস্থিতিতে বীর যোদ্ধাদের বংশধর ও পরিবারের নিকটাত্মীয় সদস্যদের পুরস্কার প্রদানের জন্য সম্মান পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি অবশ্যই বাংলাদেশের যুদ্ধ বীরদের জন্য তাঁদের (ভারত) অব্যাহত সমর্থন এবং সদিচ্ছা প্রদর্শন করে; যাঁরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য লড়াই করেছিলেন।’

চার দিনের সফরে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতের নয়াদিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী বিমানটি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিল্লি বিমানবন্দরে নামে। 

এ সময় তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা জারদোশ।