১৭ হাজার কোটি টাকার কাজ করতে চায় পাউবো।

১৭ হাজার কোটি টাকার কাজ করতে চায় পাউবো।
ডন প্রতিবেদক, সিলেট : সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৭৮টি খাল ও নদীর উন্নয়ন করতে চায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরমধ্যে ৭০টিই রয়েছে খাল। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বছর দেড়েক আগে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর একনেকে কবে পাস হতে পারে, তা এখনও নিশ্চিত নন কর্মকর্তারা। করোনার কারণে প্রকল্প অনুমোদন হতে দেরি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। তবে বৃহৎ এ প্রকল্পগুলো একসঙ্গে নয়, পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ। সারাদেশের অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনরুদ্ধার প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ২০২০ সালে এ প্রস্তাবনা পাঠায় সিলেট পাউবো। খাল ও নদী খননের আওতায় বেড়িবাঁধ, রাস্তা, খালের ওপর ওয়াকওয়ে, মাটি উত্তোলন, ভরাটসহ বিভিন্ন কাজ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সিলেটের নদী ও খালে ফিরে আসতে পারে নাব্য; সহজ হবে নৌ চলাচল। পাশাপাশি সুবিধার আওতায় আসবে বনায়ন, পানি নিস্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা, এমনকি পরিবেশেরও উন্নতি ঘটবে। নদী-খালগুলোর মধ্যে অন্যতম সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জের মানিকপুর ইউনিয়নের সদরখাল থেকে উৎপত্তি হওয়া 'মেলেটারি খাল'। খালটি পতিত হয়েছে জকিগঞ্জের সুরমা নদীতে। খালের ৪.১৬ মিটার গভীরতায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত খননে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অন্য সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বোর্ড খালটি তেলিখাল ইউনিয়নের কাটাখাল থেকে শুরু হয়ে পতিত হয়েছে সালুটিকর-গোয়াইনঘাটের সারিগোয়াইন নদীতে। ২০ কিলোমিটারের ওই খালটি ৩ মিটার গভীরতা ও ২০ মিটার প্রস্থ করে খননে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২১০ কোটি টাকা। একইভাবে বিয়ানীবাজারের সুরাই নদীর ৪৬ কিলোমিটার খননে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০২ কোটি টাকা। সুনাই নদীর ৪৬ কিলোমিটারজুড়ে উন্নয়ন কাজের জন্য এক হাজার ১০২ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। একইভাবে মোট ৭৮টি নদী ও খাল খননের প্রস্তাব করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। উল্লেখযোগ্য নদী-খালের মধ্যে প্রথম প্রস্তাবনায় রয়েছে জৈন্তাপুরের পানিজুড়ী খাল। ব্রিজ নির্মাণসহ ১১ কিলোমিটার পর্যন্ত খালটি খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া একই উপজেলার কাপনা নদী ও জাফরান খালের পেছনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাটের খাইয়া খাল ও বোয়ালী খাল খনন, ব্রিজ ও রাস্তার জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা, বিশ্বনাথের পাকিসিকি খাল, খাদুয়ার খাল, আঙ্গারু খাল খননে দেড়শ কোটি টাকা, সিলেট সদরের জৈনকার খাল পুনর্খননে দুইশ কোটি টাকা, কানাছড়া খাল পুনর্খননে ১৯২ কোটি টাকা, ফেঞ্চুগঞ্জের বেতরি খাল ও মানিককোনা বড় খাল খননে ৬৩৫ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমার কাটাখাল ও বোয়ালী খাল খননে দেড়শ কোটি টাকা, ওসমানীনগরের নারকিলা খাল ও বিয়ানীবাজারের সুরই নদী খননে ১৪শ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায়ই পাঁচ-সাতটি করে খাল ও নদী খননের প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, ৭৮টি নদী-খাল খনন, রাস্তা, সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পর্যায়ক্রমে হবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০১৭ সালে ১৭টি গ্রুপে সিলেটের আটটি নদী-খাল খনন করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে বড়ভাগা নদী, মাকুন্দা নদী, আলকাখাল, খোয়াই খাল বাচাই নদী, বীরদল খাল, ঘোড়ামারা খাল ও দুবরি খাল রয়েছে। পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বাঙলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, প্রস্তাবনা অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে। করোনার কারণে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। আশা করছি, নতুন বছরে সিলেটের এসব নদী ও খালের উন্নয়ন প্রকল্প পাস হবে।