নিউইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন ইউনূস-বাইডেন

নিউইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন ইউনূস-বাইডেন

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। দু্ই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে নিশ্চিত করেছেন ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা সাধারণত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে কোনও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না। ড. ইউনূসের সঙ্গে বাইডেনের এ বৈঠক খুবই বিরল ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন কোনও প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের কোনও সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন নি। তবে বৈঠকের দিনক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেন নি ওই কর্মকর্তা। 

এদিকে, বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হলেও নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে না ড. ইউনূসের। তবে অধিবেশনের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন ড. ইউনূস।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের দু’জনের নিউইয়র্কে উপস্থিতি একসঙ্গে হচ্ছে না। কারণ ড. ইউনূস কিছুটা পরে যাচ্ছেন। ফলে নরেন্দ্র মোদি আগে চলে আসছেন। কাজেই তাঁদের সেখানে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে, এটা স্বীকার করতে হবে। সমস্যা সমাধান করতে হলে সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না। আমরা অবশ্যই টানাপোড়েন দূর করার চেষ্টা করবো এবং কাজের সম্পর্ক যেনো হয়। তবে সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাই করবো।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক পৌঁছবেন।

তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধি দল ভাড়া করা উড়োজাহাজে নিউইয়র্ক সফর করবে না। বরং যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতোটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে। আমি উচ্চ পর্যায়ের সভাগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য দুই দিন আগে নিউইয়র্কে যাবো। প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউইয়র্ক সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বরে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন।

তিনি বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছরপূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে বাংলাদেশ। এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি। অনেক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণ করার জন্যও অনুরোধ এসেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য দেবেন ২৭ সেপ্টেম্বর। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সঙ্কট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা, উৎপাদনী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, ইউএসএইডের প্রশাসকসহ অন্যদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইতালির প্রেসিডেন্ট এবং কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের বৈঠক হতে পারে। আর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।

তৌহিদ হোসেন জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কট বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টও আয়োজন করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজ শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন নতুন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘে নতুন পদচারণা। বিশ্বসভায় বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য এবারের অধিবেশন আমাদের কাছে বিরাট সুযোগ।