ডন প্রতিবেদন : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন আজ ১৮ অক্টোবর (সোমবার)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে পালিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এইদিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পান নি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুরসঙ্গে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাঁকেও হত্যা করেছিলো। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
এদিকে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ
করেছে।
শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
এ ছাড়াও শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল স্তরের নেতাকর্মীর প্রতি বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী : শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বাণীতে আবদুল হামিদ বলেন, দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেল এক ভালোবাসার নাম।
‘রাসেল আজ দেশের আনাচে-কানাচে এক মানবিক সত্ত্বা হিসেবে সবার মাঝে বেঁচে আছেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, দিনটিকে যথাযথভাবে উদযাপন করার জন্য সরকার এ বছর প্রথমবারের মতো শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল ছিলেন সবার ছোটো, অনেক আদরের। রাসেল নামটি বঙ্গবন্ধু নিজেই রেখেছিলেন তাঁর প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়েছে কারাগারে। এজন্য শিশু রাসেল পিতার সান্নিধ্য ও আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে শহীদ হন। ঘাতকরা দশ বছরের ছোট্ট রাসেলকেও সেদিন রেহাই দেয় নি। ছোট্ট রাসেল সেদিন ঘাতকদের মিনতি করে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’। কিন্তু ছোট্ট শিশুর এ মিনতি ঘাতকদের মন একটুও গলাতে পারে নি। নিমিষেই তারা বুলেটের আঘাতে শিশু রাসেলের প্রাণ কেড়ে নেয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মৃত্যুকালে রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু তারা সফল হয় নি।
‘বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। তিনি জানতেন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শৈশব থেকেই তাঁদেরমধ্যে চারিত্রিক গুণাবলির উন্মেষ ঘটাতে হবে। জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-দীক্ষা, সততা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিশুদের মাঝে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।
রাষ্ট্রপতি শহীদ শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাসেল যদি বেঁচে থাকতো, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাঁকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারতো।
১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাসেল আজ বেঁচে থাকলে কী করতো-এই ভাবনাটা আমাকে প্রায়ই ভাবায়। আজ এতো বছর পরেও শেখ রাসেলকে জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে। কারণ রাসেল তাঁর মহানুভবতা ও ব্যবহারে ছিলো অমায়িক।’
তিনি বলেন, বিভীষিকাময় সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত এখনো গভীর শোকেরসঙ্গে স্মরণ করি। এখনো ভাবি, কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকতেই পারে, কিন্তু সেই ক্ষোভ একজন কোমলমতি শিশুকে কেন কেড়ে নিবে? এই শিশু কী দোষ করেছিলো? সে তো কোনো রাজনীতিরসঙ্গে জড়িত ছিলো না। সে কেনো এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অংশ হবে? এতসব স্মৃতি স্মরণ করতে কষ্ট হয়। বুকে পাথর বেঁধে সেইসব স্মৃতির সাগরে ডুব দেই। কারণ সেদিন ঘাতকের বুলেট যে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিলো, সে ছিলো নির্দোষ-নিষ্পাপ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল এর ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আমি তাঁকে গভীর ভালোবাসা ও পরম মমতায় স্মরণ করি এবং তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ এর প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’-যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।’’
‘শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় জন্মগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অত্যন্ত প্রিয় লেখক ছিলেন খ্যাতনামা দার্শনিক ও নোবেলজয়ী লেখক বার্ট্রান্ড রাসেল। জাতির পিতা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে বঙ্গমাতাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। তাই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতা দু’জনে মিলে শখ করে তাঁদের আদরের ছোটো ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘রাসেল’। রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে তা হলো- হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্ত শৈশব; যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথা ভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব, যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা।’
শেখ হাসিনা বলেন, এই কোমলমতি শিশু রাসেলকে আমরা হারিয়েছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে। স্বাধীনতাবিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্য শহীদ হন ওই কালরাতে। সেদিন ছোট্ট শিশু রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায় নি। রাসেল তো বাঁচতে চেয়েছিলো। বাঁচার জন্য ঘাতকদের কাছে আকুতি জানিয়েছিলো, মায়ের কাছে যাবার কথা বলেছিলো। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, শেখ রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আছে তাঁর পবিত্র স্মৃতি। বাংলাদেশের সকল শিশুর মধ্যে আজও আমি রাসেলকে খুঁজে ফিরি। এই শিশুদের রাসেলের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। এমন এক উজ্জ্বল শিশুর সত্তা বুকে ধারণ করে বাংলাদেশের শিশুরা বড় হোক। খুনিদের বিরুদ্ধে তারা তীব্র ঘৃণা বর্ষণ করুক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে তারা এগিয়ে আসুক- আজ এ প্রত্যাশাই করি।’
প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।