ডন প্রতিবেদক, বরিশাল : বরিশালের আদালত চত্বরে আসামির ছবি তুলতে গিয়ে অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় পত্রিকাসহ টেলিভিশন চ্যানেলের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় তাঁদের মোটরসাইকেলসহ ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
বুধবার (২ জানুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে থেমে থেমে চলা হামলায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হাওলাদারের বাহিনীরসঙ্গে ‘আইনজীবীর সহকারীরাও’ অংশ নেন। পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে’ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল হকের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এই হামলার ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে নি।
প্রত্যক্ষদর্শী, আদালত ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূমি জালিয়াতির অভিযোগে বাকেরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হাওলাদারসহ ৫ জনকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। সাংবাদিকেরা এই খবর সংগ্রহ করাসহ তাঁদের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে আদালত প্রাঙ্গনে অবস্থান নেন। কিন্তু আদালতে কর্মরত পুলিশ উপস্থিত সাংবাদিকদের আসামির ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে দেন নি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সংবাদকর্মীরা জানান, আসামি শহীদ হাওলাদারকে যখন কারাগারের গারদখানা থেকে বের করা হচ্ছিলো, তখন সাংবাদিকেরা ছবি ও ভিডিও ধারণের প্রস্তুতি নিলে ‘হাওলাদারের লোকজন’ বাধা দেয়। সেই বাধা উপেক্ষা করে সাংবাদিকেরা ছবি ধারণ করতে গেলে তাঁদের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা করে এবং বাংলাভিশনের ক্যামেরা পারসনসহ দুজনের ওপর চড়াও হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আদালত চত্বরে আরও সাংবাদিক উপস্থিত হন। তখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আদালত চত্বরের উত্তরে এবং সাংবাদিকেরা দক্ষিণ পাশে অবস্থান নেন। এরইমধ্যে আকস্মিকভাবে আদালতের উত্তর পাশ থেকে আইনজীবী সহকারে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন একত্রিত হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। এ সময় সাংবাদিকেরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তখন সাংবাদিকদের মারধরসহ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। সাংবাদিকেরা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, তাঁদের অন্তত ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এমন পরিস্থিতির খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী কাউকে গ্রেপ্তার করেন নি।
এদিকে, সাংবাদিকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহামুদ ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের উপস্থিতিতেও আরেক দফা সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পুলিশের হস্তক্ষেপে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, হামলায় অন্তত ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাঁদের ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
‘এই ঘটনায় করণীয় কী, তা নিয়ে প্রেসক্লাবে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল হক বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, আদালত চত্বরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ করে নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’