ডন প্রতিবেদন : নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েই পাকিস্তানকে ৯ রানে হারালো নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের পুরুষ দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেয়েছিলো টাইগাররা। নারী বিশ্বকাপেও যেনো তার পুনরাবৃত্তি ঘটলো।
এদিন হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ফারজানার অর্ধশতকের পাশাপাশি শারমীন ও অধিনায়ক জ্যোতির ব্যাটে ভর করে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান তোলেন বাংলাদেশের নারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ২৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ২২৫ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তানি নারীরা। ব্যাটারদের পর বোলারদের অসাধারণ নৈপূণ্যে নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপেই জয় পেলো বাংলাদেশ।
হ্যামিলটনে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে এ ম্যাচেও দলকে ভালো সূচনা দেয় দুই টাইগ্রেস ওপেনার শামীমা ও শারমীন। ৩৭ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। তবে শামীমা ১৭ রান করে নিদা ধারের শিকার হলে ভাঙ্গে ওপেনিং জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার শারমীনকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন ইনফর্ম ফারজানা।
শারমীন ৫৫ বলে ৬ চারে ৪৪ রান করে ওমাইমা সোহেলের শিকার হলে মাঠে আসেন অধিনায়ক জ্যোতি। তৃতীয় উইকেটে ফারজানারসঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন জ্যোতি। তবে ৬৪ বলে ৪৬ রান করা জ্যোতিকে ফাতিমা আউট করলে বিশ্বকাপে শতরানের জুটি গড়া মিস হয় টাইগ্রেসদের। ফারজানা-জ্যোতি বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ ৯৬ রানের জুটি গড়েন।
পাঁচে নামা রুমানা রান বাড়ানোর জন্য শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন। তবে ১৩ বলে ২ চারে ১৬ রান করে ফেরেন রুমানা। অপরপ্রান্তে ৮৯ বলে অর্ধশতক তুলে নেন ফারজানা। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও ফিফটির দেখা পেলেন ফারজানা। এ নিয়ে ওয়ানডেতে ৯টি ফিফটি পেয়েছেন ফারজানা।
এই ফিফটিতে টাইগ্রেসদের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক হলেন এই ব্যাটার। ১১৫ বলে ৫ চারে ৭১ রান করে ফিরলে ফারজানার মোট রান দাঁড়ায় ৯৭২। এর আগে সর্বোচ্চ রানের মালিক রুমানার পাকিস্তান ম্যাচশেষে রান দাঁড়ায় ৯৩১।
শেষদিকে রিতুমণি ও সালমা খাতুন ১১ রানে ৭/২৩৪ স্কোর পায় টাইগারেরা। পাকিস্তানের পক্ষে নাসরা সান্ধু ৪১ রানে নেন ৩ উইকেট।
এ ছাড়া ফাতিমা, নিদা এবং ওমাইমা পান ১টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের নারীরা এই ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁদের আগের সর্বোচ্চ স্কোর পার করেন। এর আগে পাকিস্তানিদের বিপক্ষে টাইগ্রেসদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিলো ২১১ রান। পাকিস্তানিরাও বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে এতো রান তাড়া করে নি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁদের আগের সর্বোচ্চ ছিলো ২২৭ রান। এই বিশ্বকাপেও ২১৭ রানের বেশি করতে পারে নি পাকিস্তানিরা। ফলে প্রথম ইনিংস শেষেই জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো টাইগ্রেসরা।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনিংয়ে বড় জুটি গড়ে বাংলাদেশের উপর চাপ দিচ্ছিলো পাকিস্তান। তার উপর টাইগ্রেস ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস ও স্লপি ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিচ্ছিলো পাকিস্তানিরা। তবে রুমানা হকের হাত ধরে কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রু পান টাইগ্রেসরা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নামা পাকিস্তান ২৩ ওভারে তুলে ফেলে ৮৯ রান। তবে রুমানা পাকিস্তান ওপেনার নাহিদাকে বোল্ড করে খেলায় ফেরায় বাংলাদেশকে। নাহিদা ৬৭ বলে ৪৩ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।
এরপর ফাহিমা, জাহানারা ও রুমানার বোলিং নৈপূণ্যে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তানিরা। তিনে নামা বিসমাহ মারুফকে ব্যক্তিগত ৩১ রানে ফেরানোর পর মিডল অর্ডারে ব্যাটিং ধস নামায় টাইগ্রেসরা। টানা তিন পাকিস্তানি ব্যাটারকে শূন্য রানে ফেরান টাইগ্রেস বোলাররা। এরমধ্যে ফাহিমা আলিয়া ও ফাতিমাকে টানা দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগায়। তবে হ্যাটট্রিক না পেলেও ফাহিমা দারুণ চাপে রাখে পাকিস্তানিদের। তাঁরসঙ্গে শেষদিকে রুমানা, সালমা ও নাহিদার দারুণ বোলিংয়ে রান রেটের চাপে পড়ে পাকিস্তানিরা।
শেষদিকে পাকিস্তানের হয়ে একাই লড়াই করছিলেন ওপেনার সিদরা আমিন। এই ব্যাটার শতক হাঁকিয়ে ১০৪ রান করে রান আউট হয়ে ফিরলে পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। এক পর্যায়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিলো ১৬ রান। তবে হাতে ছিলো মাত্র ১ উইকেট। নাহিদার করা শেষ ওভার থেকে মাত্র ৬ রান তুলতে পারে পাকিস্তানি নারীরা। শেষ পর্যন্ত ৯ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বিসমাহ মারুফের দল। এ নিয়ে বিশ্বকাপে টানা ১৮ ম্যাচে হার দেখলো পাকিস্তান।
টাইগ্রেসদের পক্ষে ফাহিমা ৩৮ রানে ৩টি এবং রুমানা ২৯ রানে নেন ২ উইকেট।
এ ছাড়া সালমা ও জাহানারা পেয়েছেন ১টি করে উইকেট। দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানো ফাহিমা পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার।