পূর্বাচলে পহেলা জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। থাকবে বাস সার্ভিস।

পূর্বাচলে পহেলা জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। থাকবে বাস সার্ভিস।
ডন প্রতিবেদন : পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) শুরু হচ্ছে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২। যা শুরু হবে আসছে পহেলা জানুয়ারি। এ বার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে সাজানো হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। আর এ বারই প্রথম দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকছে ৩০টি বিআরটিসি বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে এসব বাস। বাসগুলোতে ২৫ টাকা ভাড়ায় দর্শনার্থীরা যাতায়াত করতে পারবেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আগামি পহেলা জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইপিবিকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি ১ জানুয়ারি থেকে মেলা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছেন। ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, এ বার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে মেলা সাজানো হচ্ছে। বাণিজ্য মেলার গেটের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। এবার গেটের থিমে প্রাধান্য পাবে ১০ মেগা প্রকল্প। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরসঙ্গে বৈঠক হয়েছে। স্টল বরাদ্দের জন্য টেন্ডার বাছাইয়ের কাজ চলছে জানিয়ে ইপিবির সচিব ও মেলার এ পরিচালক বলেন, বিশ্বব্যাপী যে সিস্টেমে মেলা হয়, এ বার তাই হবে। মেলার ভেতরে সেল স্ক্রিন দিয়ে ছোট ছোট স্টলগুলোর সীমানা দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের মতো করে ডেকোরেশন করবে। করোনার জন্য এবার স্টলগুলোর মাঝখানে বেশি দূরত্ব রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় স্টল সংখ্যা কমানো হয়েছে। ‘মিলনায়তনের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে ২২৫ থেকে ২৩০টি স্টল থাকবে। এতে করে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এ বারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টলসহ ৩২টি ক্যাটাগরি রয়েছে। সাধারণ যেসব মেলা মিলনায়তনেরমধ্যে হয়, সেখানে কখনো নিজের মতো করে স্টল দেওয়া যায় না। ফ্লোর খুঁড়ে তো আর স্টল করা যাবে না। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। একসঙ্গে ৫শ লোক বসে খাবার খেতে পারবে।’ ‘এ ছাড়া আরও ১২-১৩টি স্টল থাকবে।’ ইপিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার মেলার ভেতর পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা হচ্ছে। প্রাণ, যমুনা, স্যামসাং, আবুল খায়ের, হোন্ডার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে স্টলের জন্য আবেদন করেছে। ভেতরে যে ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল আছে এরমধ্যে ২২টি বরাদ্দ হয়ে গেছে। নতুন মেলাকেন্দ্রে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫শটি গাড়ি রাখা যাবে। তবে মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। এ ছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ আছে। জানা গেছে, পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যারমধ্যে চীন অনুদান দিয়েছে ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, আর বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ২৩১ কোটি টাকা এবং ইপিবি’র নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার ও এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলে ৮০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথের আয়তন ৯ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার। এ ছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি-ফাংশনাল মিলনায়তন, ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ছয়টি মিটিং রুম, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, দুটি অফিস রুম, মেডিক্যাল রুম, ডরমেটরি-গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক এড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম এবং ইনবিল্ট ইন্টারনেট। প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো। প্রতিবছর জানুয়ারির ১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এ মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে চলতি বছর বাণিজ্য মেলা হয় নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।