ওবায়দুল কাদেরকে ‘ধন্যবাদ’-আইনমন্ত্রীর ‘ইউটার্ন’ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ধিক্কার’

ওবায়দুল কাদেরকে ‘ধন্যবাদ’-আইনমন্ত্রীর ‘ইউটার্ন’ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ধিক্কার’
ডন প্রতিবেদন : বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের ‘দ্বিচারিতা’ ও বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, সরকারের কর্মকাণ্ড এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অনাস্থার কারণ ঘটিয়েছে। হিন্দুদের মন্দির, পূজামণ্ডপ, দোকানপাট, বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট এবং হতাহতের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ‘দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন’ হিসেবে মন্তব্য করে নেতারা তাকে ধিক্কার জানিয়ে আগামী ১২ নভেম্বর সারা দেশে ‘ধিক্কার মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আজ শনিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদের নেতারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে তার গত ২ নভেম্বরের বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানান। নেতারা বলেন, ওবায়দুল কাদের সত্য কথা তুলে ধরেছেন। ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন নয়, সাক্ষী সুরক্ষা আইন করবে সরকার’- আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এই ইউটার্ন আমাদের হতবাক ও বিস্মিত করেছে।’ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি পূজামণ্ডপে হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘১৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২৭ জেলায় মোট ১১৭টি মন্দির বা পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। মোট আক্রান্ত বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০১ এবং মোট নিহত হয়েছেন নয় জন। এরমধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন চার জন।’ তিনি বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমাদের দেশের কোনও রাজনৈতিক দল ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচারে সাম্প্রদায়িক হামলার হচ্ছে, এমনটা কখনোই স্বীকার করতে চায় নি। অনেকেই এ ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এবারও দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি করে চলেছে। এরমধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে, অতীতেও এমন হামলা হয়েছে, আজও হচ্ছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে তা চলছে।’ লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি আমাদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। সামগ্রিক ঘটনাকে লঘু করে দেখাবার তার প্রবণতা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষুণ্ণ করেছে।’ ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে পবিত্র কোরআন শরীফ যিনি কুমিল্লার পূজামণ্ডপের হনুমানের মূর্তিতে রেখেছিলো তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে বলে মূল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বিবৃতির জন্যে আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা তাকে ধিক্কার জানাই এবং আগামী ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টায় সারাদেশে ‘ধিক্কার মিছিল’ আয়োজনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’’ ঢাকায় এ কর্মসূচি শাহবাগ চত্বরে এবং চট্টগ্রামে প্রেসক্লাব চত্বরে পালিত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার ও দুজন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বক্তব্য দেন।