আনন্দময়ীর ‘বিদায় বেলা’

ডন প্রতিবেদন : মর্ত্যে বাবার বাড়ি বেড়ানো শেষ; দোলায় চেপে কৈলাসের দেবালয়ে ফেরার সময় হলো আনন্দময়ী দেবী দুর্গার। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের সূচনা হয়েছিলো, তার সাঙ্গ হতে চলেছে আজ (শুক্রবার : ১৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে। ঢাকা মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, আজ (শুক্রবার : ১৫ অক্টোবর) সকাল ৭টা থেকে ৯টা ১১ মিনিট পর্যন্ত বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ ও পরে ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি ঘটেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ি, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব। নবরাত্রির ষষ্ঠদিন সোমবার (১১ অক্টোবর) দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিলো এবার। তবে অষ্টমীর দিন বুধবার (১৩ অক্টোবর) সাম্প্রদায়িক উসকানি আর কয়েকটি জেলায় মণ্ডপ-মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় সার্বজনীন এ উৎসবের চেতনায় চোট লেগেছে। মহা নবমী পেরিয়ে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তাঁর কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা। শ্বশুরালয়ে ফেরার আগে দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গাকে সিঁদুর, পান আর দুর্বা দিয়ে বরণ কর নেন নারী পূণ্যার্থীরা; এরমধ্য দিয়ে জরা কাটিয়ে পৃথিবী যেনো শস্য শ্যামল হয়ে ওঠে, সেই প্রার্থনাই করা হয়। ‘মহিষাসুর বধের’ আনন্দের পাশাপাশি দেবী বিদায়ের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে বিষাদের সুরও বাজছে। সকাল থেকেই রাজধানির বিভিন্ন মন্দির ঘুরে অশ্রুসজল চোখে দেবী দুর্গার চরণে শেষ মুহূর্তের প্রার্থনা জানিয়েছেন ভক্তরা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মহিষাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে আজ বিজয়ী হয়েছেন দুর্গা মা। সে কারণেই আজ আমাদের আনন্দের দিন, আমরা উৎসব করি। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই।’ আজ (শুক্রবার : ১৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে রাজধানির ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা ও পোস্তগোলা ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন বলেন, ‘আজ শুক্রবার জুমার নামাজের কথা বিবেচনায় রেখে আমরা নামাজের পর বেলা ৩টায় নিরঞ্জনের সময় নির্ধারণ করেছি, যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’ কিশোর রঞ্জন জানান, প্রতিমা নিরঞ্জন শেষে মন্দিরে শান্তির জল নিয়ে আসা হবে; সন্ধ্যায় মণ্ডপে হবে ‘আশির্বাদ প্রদান’। এরমধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। এবারের পূজায় করোনারভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন পুরোহিতরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসমতে, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ি, দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমনের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ি, দুর্গা এবার এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। কৈলাসে দেবালয়ে ফিরছেন দোলায় চেপে। এবার দেশজুড়ে ৩২ হাজার ১১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় এক হাজার ৯০৫টি মণ্ডপ বেড়েছে। ঢাকায় এ বছর দুর্গাপূজা হয়েছে ২৩৮টি মণ্ডপে।