‘অনেক সম্পাদক এখন মালিকের পিআর কর্মকর্তা’

‘অনেক সম্পাদক এখন মালিকের পিআর কর্মকর্তা’

ডন প্রতিবেদন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, অনেক সম্পাদককে এখন মালিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। খ্যাতিমান সাংবাদিক আতাউস সামাদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় এ কথা বলেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো জানি, এখন সাংবাদিকরা কী বিপদের মধ্যে আছেন। তারা যে সংবাদ নিয়ে যান, সেটা প্রকাশ পায় না। সেটা মালিকের অধীনে চলে যায়। এবং মালিক হচ্ছেন টাকার জোরে মালিক হয়েছেন।’ ‘অনেক সম্পাদককে বলতেই হয়…. অনেক সম্পাদকের দায়িত্ব হচ্ছে মালিকের পাবলিক রিলেশনস অফিসার হিসেবে কাজ করা।’ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন নানাভাবে হরণ হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মালিক হরণ করছে, আবার অন্যদিকে রাষ্ট্র হরণ করছে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব হরণ করছে।’ এই পরিস্থিতিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সিরাজুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের সমস্ত পেশারমধ্যেই বিভাজন এসেছে। কিন্তু এও দেখছি পেশাজীবীরা আবার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। যেমন পুলিশদের অ্যাসোসিয়েশন, চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস, তাঁদের ওপর অন্যায় হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবৃতি দেন। সেই ঐক্যটা খুব জরুরি।’ ‘তবে সাংবাদিকদের ঐক্য জরুরি কেবল যে তাঁদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বা রক্ষার জন্য তা নয়, সেটা হচ্ছে দেশের জন্য। তাঁরা এই কাজটা করেন, তাহলে তা সমস্ত দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তাঁরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবেন।’ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের উপর ‘অপমানজনক তৎপরতা’ চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের উন্নতি একপেশে এবং তা বৈষম্য সৃষ্টি করছে বলে দাবি করেন বাম আদর্শে বিশ্বাসী এই শিক্ষক। ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেই উন্নয়ন হচ্ছে একপেশে ওপরের দিকে খাড়াখাড়ি হয়ে চলে গেছে। এই উন্নয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। এই উন্নয়ন বৈষম্য সৃষ্টি করছে। যতো উন্নয়ন হচ্ছে, ততো বৈষম্য বাড়ছে।’ সাংবাদিক আতাউস সামাদকে স্মরণ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি তাঁর সাংবাদিকতার বিবর্তনটা দেখেছি, এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা থেকে শুরু করে বিবিসির সংবাদদাতা হলেন। আমার দেশ পত্রিকার দায়িত্ব নিলেন, এনটিভির দায়িত্ব নিলেন…’ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় পাকিস্তান অবজার্ভারের সংবাদদাতা হিসেবে আতাউস সামাদকে দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই সময় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে নিয়ে গেছেন। এই যে কাজ তো অন্য কোনও সাংবাদিক করতে পারতো না।’ ‘দুইজনের আস্থাভাজন তরুণ রিপোর্টার। সেটা তো একটা অসামান্য ঘটনা। সেরকম ঘটনা একজন সাংবাদিকের জীবনে খুব কমই আসে।’ আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে এই সভায় পরিষদের উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ সভাপতিত্ব করেন। এতে আতাউস সামাদের কর্ম ও জীবনের নানা দিক নিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, কবি হেলাল হাফিজ, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, মুন্নি সাহা, শামসুল হক জাহিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ অনেকে স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানে আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথম এ পুরস্কার পান বাংলাদেশে রয়টার্সের আলোকচিত্র সাংবাদিক এ বি এম রফিকুর রহমান।