সেমিস্টার শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্র ছাত্র ভিসার আবেদন সুরাহা করবে।

সেমিস্টার শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্র ছাত্র ভিসার আবেদন সুরাহা করবে।

বাসস : ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তাঁরা ফল সেশনের (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সেমিস্টার) আগে জমে থাকা ছাত্র ভিসা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী। এজন্য কনস্যুলার বিভাগ শুক্রবার (২২ জুলাই) সপ্তাহান্তে তাঁদের প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত ছিলো।

মার্কিন দূতাবাসের একজন কনস্যুলার কর্মকর্তা বাসস’কে বলেন, ‘আমরা সেশনজট দূর করার জন্য সবকিছু করছি, দূতাবাস সত্যিই এটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, কনস্যুলার বিভাগ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সেমিস্টার শুরুর আগে জমে থাকা ছাত্র ভিসার বিষয়টির সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী। কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ শুধু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সেমিস্টারে যোগদান করতে ইচ্ছুক ছাত্র ভিসা প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত রয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগটি কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অভিবাসী এবং অ-অভিবাসী উভয় ভিসা আবেদন সেশনজটের সম্মুখীন হয়েছে, যখন অনেক বাংলাদেশি ছাত্র বিশেষ করে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁদের ব্যক্তিগত ক্লাসগুলো ধরার জন্য ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছে।

বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা ফল সেমিস্টার শুরুর আগে যতোটা সম্ভব শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য শুক্রবারও কাজ করে বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কনস্যুলার অফিসার জানিয়েছেন, ‘আমরা জানি, এই সেশনজট একজন শিক্ষার্থীর জন্য কতোটা হতাশাজনক। তাই আমরা সেশনজট দূর করার জন্য খুব কঠোর পরিশ্রম করছি। তাই আমরা শুক্রবারও কাজ করছি ।এটি আমাদের জন্য একটি অগ্রাধিকারমূলক কর্ম।’ 

তিনি বলেন, গত শুক্রবারই দূতাবাস ভিসার জন্য আবেদনকারী ৬ শ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এই ধরনের ভিসার উচ্চ চাহিদা মেটাতে মিশনকে অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৯ জুলাই শুক্রবার আরেকটি ‘সুপার ফ্রাইডে’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘আমরা সত্যিই নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা যতোট সম্ভব ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারি, যাতে শিক্ষার্থীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন,’ বলছিলেন কর্মকর্তা।

মার্কিন দূতাবাস দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁদের নির্ধারিত ক্লাস শুরুর আগে ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট পেতে ব্যর্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ প্রদান করছে।

দূতাবাসটির কনসাল জেনারেল উইলিয়াম ডাওয়ারস ‘সুপার ফ্রাইডে’ উদ্যোগের ব্যাপারে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের অফার করা অনন্য সুযোগকে আমরা স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং আমরা স্টুডেন্ট ভিসা ইন্টারভিউকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

একজন আন্ডার গ্র্যাজুয়েশনের ছাত্রী জেরিন আলি, যিনি আসন্ন সেমিস্টারে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে চান, তিনি বলেন, তিনি প্রথম ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট পেয়েছিলেন। 

‘কিন্তু আমার ক্লাস এই বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে শুরু হবে। ফলে তাতে আমি অংশ নিতে পারবো না।’

জেরিন আলী জানান, তাঁর ক্লাস শুরু হওয়ার আগে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং ১০ দিন পর তিনি শুক্রবার, ২২ জুলাই নতুন সাক্ষাৎকারের তারিখ নিশ্চিত করে একটি ই-মেইল পান।

শুক্রবার ভিসা পাওয়ার পর কনস্যুলার বিভাগে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ভিসা প্রক্রিয়াটি খুব জটিল হবে, কিন্তু বাস্তবে এটি খুবই মসৃণ হয়েছে।’

সুপার ফ্রাইডের জরুরি সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেয়েছেন শীতা বিশ্বাস নামের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী। তিনিও আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি জরুরি সাক্ষৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেয়ে আনন্দিত, অন্যথায় আমার পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগদান করা সম্ভব হতো না।’

শীতা বিশ্বাস তাঁর স্বামী অনিক কুমারকে নির্ভরশীল হিসেবে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন।

মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে এবং বর্তমানে এই সংখ্যা বার্ষিক সাড়ে ৮ হাজারেরও বেশি।

ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ওপেন ডোরস-এর ২০২১-এর রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ বর্তমানে সারা বিশ্ব থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ১৪তম স্থানে রয়েছে। যেখানে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে সূচকে দেশের র‌্যাঙ্কিং ছিলো ১৭।

এদিকে মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে। এটি ২ শ টিরও বেশি দেশ থেকে ৯ লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, যে কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাগত সুযোগের বিষয়ে আগ্রহী হলে, তাঁরা এডুকেশনইউএসএ’র মাধ্যমে সার্বিক বিষয় জানতে পারে। 

বিশ্বের ১৭৫টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ৪৩০টিরও বেশি শিক্ষামূলক পরামর্শ কেন্দ্রের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক এটি।