সেই মদ-বিয়ার ফেরত পাচ্ছে উত্তরার লেকভিউ রেস্টুরেন্ট

সেই মদ-বিয়ার ফেরত পাচ্ছে উত্তরার লেকভিউ রেস্টুরেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জব্দ করা বিপুল পরিমাণ মদ ও বিয়ার ফেরত পাচ্ছে রাজধানীর উত্তরার লেকভিউ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার কর্তৃপক্ষ। বৈধ কাগজপত্র থাকায় গত রোববার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-১২ আদালতের বিচারক মাহবুব আহমেদ এ নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বুধবার ৪১৫ বোতল বিদেশি মদ ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাঁচ হাজার ৯৫৭ ক্যান বিয়ার লেকভিউ কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ৪৩ বোতল মদ ও ২৪৮ ক্যান বিয়ারের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

গত ৬ অক্টোবর লেকভিউ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে অভিযান চালায় ডিবি। এ সময় ৪৫৮ বোতল বিদেশি মদ, ৬ হাজার ২০৫ ক্যান বিয়ার ও নগদ এক লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়। অভিযান শেষে ডিবি দাবি করেছিল, জব্দ করা মদ ও বিয়ার অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছিল। এমনকি বারটির লাইসেন্স নেই বলেও দাবি করা হয়েছিল। যদিও শুরু থেকেই বৈধতা দাবি করে আসছে মালিকপক্ষ। একপর্যায়ে লেকভিউ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারের পক্ষে মো. দেলোয়ার হোসেন মদ-বিয়ারের বৈধতা দাবি করে আদালতে আবেদন করেন। আদালত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। ৩ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তরের সংশ্নিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর গত রোববার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-১২ আদালতে উভয়পক্ষের শুনানি হয়। বিচারক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন।

আদালত বলেন, লেকভিউ রেস্টুরেন্টের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় একটি বারের লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে এবং তা হালনাগাদ নবায়ন করা আছে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রও সঠিক। লেকভিউ বারের সপ্তম তলায় বার লাইসেন্সের অনুমোদন না থাকলেও সেখান থেকে জব্দ করা মদ ওই বারের নামে সরকারি রাজস্ব দিয়ে কেনা। এগুলোর মধ্যে ৪৩ বোতল বিদেশি মদ ও ২৪৮ বিয়ার ক্যান কেনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য এগুলো থেকে এক বোতল মদ ও বিয়ারের প্রতি ব্র্যান্ডের এক ক্যান করে রেখে বাকিগুলোর বিষয়ে ডিএনসির ঢাকা উত্তরের উপপরিচালককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

লেকভিউ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারের পক্ষের আইনজীবী আলমগীর হোসেন সিকদার বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘যেগুলোর কাগজপত্র নেই, সেগুলোও মালিকপক্ষ চাইলে মাদক আইনে কিনে নিতে পারবে। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে বৈধ মদ ও বিয়ার বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে বুঝে নেওয়া হবে।’

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন উত্তরা পশ্চিম থানার জিআরও লিয়াকত আলী। বাঙলার কাগজ ও ডনকে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র ছাড়াই যেসব মদ ও বিয়ার আনা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ডিএনসিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। বাকি জব্দ করা সবকিছু ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’

৬ অক্টোবর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গরিবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউর ৩৯ নম্বর ভবন লেকভিউ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে অভিযান চালায় ডিবি। এ সময় বারের ব্যবস্থাপকসহ ৩৪ জনকে আটক ও বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়। পরে এ ঘটনায় পুলিশ উত্তরা পশ্চিম থানায় লেকভিউর কর্ণধার মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে। ১২ অক্টোবর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলে সেখানেও জামিন পান তিনি। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ৩৪ জনও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।