সিইসি বললেন, ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে ভোটের সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয়

সিইসি বললেন, ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে ভোটের সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয়
ডন প্রতিবেদন : ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে নির্বাচনি সহিংসতা থামানো যায় না বলেই মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। বুধবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সিইসি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, এটা ঠিকই। অনেকগুলো প্রাণ চলে গেছে, এটা কাম্য নয়। ইতোপূর্বে যখনই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে, আমরা মোকাবিলার চেষ্টা করেছি। যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বি, যাঁরা ভোটার, তাঁদেরমধ্যে সহনশীলতা থাকতে হবে। আমরা সেটা বারবার বলি। আমরা ঘটনা ঘটলে সেখানে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিই। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাঁরা আছে, অনেক বেশি। প্রতিকেন্দ্রে ২২ জন করে ফোর্স থাকে। যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা আগের। হঠাৎ করে কোনও ঘটনা ঘটলে কেউ প্রস্তুত থাকে না। এগুলো ক্রিমিনাল অফেন্স। পুলিশ এগুলো দেখছে। তাঁরা কেনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, যখন একটা ঘটনা ঘটে, তখন তাঁদের অজান্তে, অনুপস্থিতিতে ঘটে যায়। তো সেটা এতো বড় নির্বাচনে লাখ লাখ লোক অংশ নেয় একটা নির্বাচনে। আমি প্রথমেই বলেছি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো যাঁরা ভোটেরসঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, তাঁদের সহনশীলতা। এটা দায়দায়িত্ব প্রশাসনকে দেওয়া বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া বা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া, এটা দিয়ে দিলে হবে না। এজন্য তাঁরাই দায়ী। অনেকগুলো ঘটনা ঘটে তালুকদার বংশ, খান বংশ এ রকম হয়। রাস্তার এপার-ওপার এ রকম হয়। তারপরে দলীয় কোন্দলে হয়। পূর্ব শত্রুতার জেরে হয়। কতগুলো ঘটনা আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। স্থানীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। পুরনো শত্রুতার জের হিসেবেও ঘটনাগুলো ঘটে। কাজেই সেই অবস্থা আছি। আমরা তো তাঁদের অনুরোধ করি যেনো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে। যেটা ঘটে যায়, সেটা তো ফৌজদারি অপরাধ। কাজেই দায়-দায়িত্ব কাকে দেওয়া যায়, হয়তো মনে হয়, যাঁরা ভোটে অংশ নেন, তাঁরা যদি সহনশীল থাকেন, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দরকার হয় না। আমাদেরও এতো তৎপরতার দরকার হয় না। অরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, গতকাল বা তার আগেরদিন একটি চিঠি দিয়েছেন যাঁরা সুশীল সমাজ, স্থানীয় প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন পরিচালনা করে তাঁদের নিয়ে যেনো স্থানীয় প্রশাসন সভা করে। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমেও আমরা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য বলেছি। ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। এ সময় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন- আমরা তদন্ত করে নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট আসতে থাকবে, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবো। নির্বাচনি সহিংসতার অ্যাডভানটেজ নিয়ে কিছু গুপ্ত হত্যা হয়েছে। মেহেনপুরে যেটা হয়েছে, সেটা কিন্তু গুপ্তহত্যা। এই গুপ্তহত্যা থামানো বেশ কষ্টকর। তারপরও তাঁরা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী) আইনের আওতায় এনে যথাযোগ্য শাস্তির আওতায় আনতে পারেন, সেজন্য আমার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। রেগুলার আমরা মনিটরিং করছি। নির্বাচন ছাড়াও কিন্তু দেশে অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গেই এগুলো বেড়ে যায়। আমরা এজন্য সহনশীল হওয়ার জন্য বারবার বলছি। ইসি কি দায় এড়াতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, দায় এড়ানোর বিষয় না। আমরা তো বলেছি ঘটনা যখন হয়, সেটা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে হয় না। যেমন নরসিংদীতে যেটা হলো, রাত তিনটার সময় গিয়ে গুলাগুলি করেছে। তো রাত তিনটার সময় কারা গুলাগুলি করতে যাবে, সেজন্য ইসি কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক তো সে সময় থাকে না। আরেকটা কথা হলো, ঠিক এ জাতীয় ঘটনা পাহারা দিয়ে ঠেকানো যায় না। বাস্তবতা হলো এটা আপনাদের বুঝতে হবে। ঘরে ঘরে মহল্লায় মহল্লায় পুলিশ দিয়ে পাহারা দিয়ে এ জাতীয় অপ্রীতিকর ঘটনা থামানো যায় না। এটা থামানোর একমাত্র উপায় হলো, যারা নির্বাচনেরসঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি আছেন, তাঁদের সহনশীলতা এবং তাঁদের নির্বাচনসুলভ আচরণ করা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োগের অভাব আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইন বিষয়টা হলো অভিযোগ আসলেই আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পারি। না হলে তো পারি না। এটা আইনের বিষয়। এজন্য তদন্ত করতে হয়। সত্য, মিথ্যা যাচাই করে অ্যাকশনে যাই। পত্রিকা বা ফেসবুকে আসলে তো আমরা হঠাৎ করেই ব্যবস্থা নিতে পারি না। তিনি আরও বলেন- দল, এমপি, এদের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা মামলা করতে পারি। শোকজ করতে পারি। কোনও এমপি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে এগুলো আমরা করতে পারি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকটিভ, আমরাও অ্যাকটিভ। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত থাকি না। অবশ্যই ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে। ৮১ শতাংশ ভোটও আগে কাস্ট হয়েছে। এবারও আসবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পরিষ্কার নির্দেশনা আছে, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কঠোর হাতে তাঁরা তা দমন করবে। কোনও শঙ্কা নেই তৃতীয় ধাপে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।