তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদার খালাস

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদার খালাস
ডন প্রতিবেদন : মন্ত্রীর সুনামক্ষুণ্ণের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় খালাস পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ছয় বছর আগের এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, যাদেরকে এ মামলায় ভিকটিম বলা হয়েছে, তারা নিজেরা এ মামলা করেন নি বা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন কেউ এ মামলার বাদি নন। এমনকি তারা এ মামলায় সাক্ষিও ছিলেন না। মামলা করেছেন দূরের একজন, যার এ অভিযোগে মামলা করার এখতিয়ার নেই। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রবীর সিকদার বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।’ একাত্তরে শহিদের সন্তান প্রবীর সিকদার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এর আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসির হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি। এই সাংবাদিকের অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনির ‘সহযোগি’ মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে ‘তার ভাড়াটে সন্ত্রাসিরা’ ওই হামলা চালায়। ফেসবুকে লেখার মাধ্যমে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ‘সুনামক্ষুণ্ণের’ অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় প্রবীরের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এ মামলা করেন এপিপি স্বপন পাল। শহিদ পরিবারের সন্তান প্রবীর ওই বছর ১০ আগস্ট এক ফেসবুক পোস্টে নিজের জিবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘তার কিছু হলে’ খন্দকার মোশাররফ, বিতর্কিত ব্যবসায়ি মুসা বিন শমসের এবং ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার এবং তার অনুসারি-সমর্থকরা দায়ি থাকবেন। এরপর ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানির ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে প্রবীরকে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। রাতেই তাকে নেওয়া হয় ফরিদপুরে। এরপর ফরিদপুরের এপিপি স্বপন পাল তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করলে সে সময় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। ওই মামলায় সাংবাদিক প্রবীরকে রিমান্ডেও পাঠিয়েছিলো আদালত। তবে রিমান্ডের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই জামিনে মুক্তি পান প্রবীর সিকদার। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনির হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ ফরিদপুরের আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দিলে বিচারক মামলাটি ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠান। ওই বছর ৪ আগস্ট ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২২ মার্চ আদালত এ মামলার রায়ের পর্যায়ে আসে। দুই দফা তারিখ পরিবর্তনের পর বৃহস্পতিবার প্রবীর সিকদারকে খালাসের সিদ্ধান্ত দিলেন আদালত। যুক্তিতর্কে যা বলেছিলেন আইনজীবীরা : প্রবীর সিকদারের পক্ষে তার প্রধান আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে বলেছিলেন, এই সাংবাদিক প্রভাবশালিদের রোষের শিকার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবীর সিকদারের বাবা, দুই কাকা, মামা, দাদুসহ ১৪ জনকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল কুমার নদীতে। আর ২০০১ সালে তিনি নিজে সন্ত্রাসিদের হামলায় পঙ্গু হয়েছেন সাংবাদিকতার কারণে। ফেইসবুকে লেখালেখির কারণে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে ২০১৫ সালে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন প্রবীর সিকদার। কিন্তু পুলিশ তা নেয় নি বলে পরে ফেসবুকে এক লেখায় তিনি জানিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ ধরে আইনজীবী টিটো শুনানিতে বলেছিলেন, ‘প্রবীর সিকদার বাঁচার জন্য আকুতি করেছেন, তার জীবনাশঙ্কা তার প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে জিডি নেওয়া হয় নি বলে ফেসবুকে তা প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে নিরাপত্তা সঙ্কটের কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ, বাচ্চু রাজাকার ও নুলা মুসার নাম উল্লেখ করেন।’ ‘তিনি ওই লেখার দায় স্বিকার করেন, কিন্তু কোনও অপরাধ তিনি করেন নি। বেঁচে থাকার অধিকার সবার আগে। পুলিশ তার অভিযোগ নিচ্ছে না বলে তা প্রকাশ করা কোনও অপরাধ নয়।’ যুক্তিতর্কে আইনজীবী টিটো বলেছিলেন, ‘‘তিনি ধারাবাহিকভাবে দৈনিক জনকণ্ঠে ‘তুই রাজাকার’ শিরোনামে প্রতিবেদন লিখেছিলেন, যে কারণে তার ওপর হামলা হয়। তিনি ফরিদপুর শহরের দয়াময়ী ভবন বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।’’ তাঁর যুক্তি ছিলো, ‘সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর থেকে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর হওয়ার জন্য, মন্ত্রীর অনুকম্পা পাওয়ার জন্য এ মামলা করেছেন বাদি স্বপন পাল।’ অপরদিকে ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম মামলা প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে প্রবীর সিকদারের সাজা চেয়েছিলেন।