রাজশাহীর কাটাখালীর মেয়র প্রতিদিন বাড়তি আদায় করেন ৫০ হাজার টাকা!

রাজশাহীর কাটাখালীর মেয়র প্রতিদিন বাড়তি আদায় করেন ৫০ হাজার টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী : রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার আয়ের প্রধান উৎস শ্যামপুর বালুর ঘাট। আর এই বালুর ঘাট নিয়ে চলছে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি। সরকারিভাবে শ্যামপুর বালুর ঘাটে ২ শ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার ঘাটটি দেওয়া হয়েছে ইজারাও। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক ৩ শ টাকা করে টোল আদায় করছেন কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহাদাত হোসেন নান্নু। এই টাকা আদায়ে একটি গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন তিনি। ফলে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে নিজের পকেটে পুরছেন ভারপ্রাপ্ত এ মেয়র।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শ্যামপুর বালুর ঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ শ ট্রাক বালি ভর্তি করে যাতায়াত করে। আর প্রতিটি ট্রাকে বাড়তি ১ শ টাকা করে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে বালু পরিবহনকারীদের। প্রতিদিন ৫ শ ট্রাক থেকে মেয়র ৫০ হাজার টাকা প্রতিদিন নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করছেন। অতিরিক্ত এই টাকা ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহাদাত হোসেন নান্নুর সঙ্গে মানিক, আবু শামা, নজরুল ও ছাত্রলীগ নেতা জনি মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন।

ঘাট সূত্রে জানা গেছে, কাটাখালী শ্যামপুর বালুরঘাটের বৈধ ডাক হয় ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। পৌরসভার কোষাগারে জমা দেওয়া হয় মাত্র ৬৯ লাখ টাকা। আর বাদবাকি টাকা চলে যাচ্ছে অবৈধ সিন্ডিকেটের পকেটে। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিজেই। সঙ্গে রয়েছেন পৌর সচিব সিরাজুম মনির, জনি, নজরুল ও কিছু কাউন্সিলর। এঁরাই মূলত যোগসাজশ করে একত্রিত হয়ে কাটাখালীকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন।

এ বিষয়ে বালু ঘাটের ইজারাদার রিপনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, আমি নামমাত্র ইজারাদার। এ বিষয়ে যা বলার কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র নান্নুর সঙ্গে কথা বলেন।

সার্বিক ব্যাপারে জানার জন্য কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহাদাত হোসেন নান্নুর মুঠোফোনে ফোন দেন এ প্রতিবেদক। কিন্তু নান্নু ফোন রিসিভ করেন নি।

সূত্র জানায়, প্যানেল মেয়র নান্নু নিয়ম বহির্ভূতভাবে পৌরসভার কোষাগার থেকে অতিরিক্ত সম্মানি ভাতা উত্তোলন করছেন। এক্ষেত্রে কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের সম্মানি ভাতা ৯ হাজার টাকা হলেও তিনি উত্তোলন করছেন ৩০ হাজার টাকা করে। এমন অনিয়মে যুক্ত হয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে মাস্টার রোলে দুইজন ড্রাইভার নিয়োগ। ফলে তাঁদের বেতনও পৌরসভার কোষাগার থেকে দিয়ে ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, প্যানেল মেয়র নান্নু ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌরসভার খরচে ব্যক্তিগত চেম্বারের জন্য ৩ জন বয় নিয়োগ দিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের বোনের মেয়েকেও মাস্টার রোলে নিয়োগ প্রদান করেছেন।

পৌরসভাটির একাধিক কাউন্সিলর অভিযোগ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এই কাটাখালী পৌরসভায় দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। কাজ না করেও বিভিন্ন বিল উত্তোলন থেকে শুরু করে নানা ও অনিয়ম দুর্নীতিতে জর্জরিত এ পৌরসভা।’ 

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ না করলে খুব দ্রুত পৌর কোষাগার শূন্য হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। 

এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।