ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐতিহাসিক মুহূর্ত : ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেলো প্রথম টিকা

ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐতিহাসিক মুহূর্ত : ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেলো প্রথম টিকা
ডন প্রতিবেদন : ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের প্রথম টিকার অনুমোদন দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর আফ্রিকায় লাখো শিশুর মৃত্যু ঠেকানোর পথ তৈরি হলো। বিবিসি লিখেছে, একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর ম্যালেরিয়ার একটি কার্যকর টিকা তৈরির বিষয়টি চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্যই বড় এক অর্জন। বিশ্বের অন্যতম পুরোনো এবং অন্যতম প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ এই ম্যালেরিয়া। মশাবাহিত এ রোগে প্রতি বছর মোটামুটি ২৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। তাঁদেরমধ্যে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর ৯৫ শতাংশই ঘটে সাব সাহারা আফ্রিকায়। তাঁদেরমধ্যে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের তৈরি করা আরটিএস,এস নামের এই টিকা কেবল ম্যালেরিয়া নয়, যে কোনও পরজীবীঘটিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষের তৈরি করা প্রথম কার্যকর টিকা। ম্যালেরিয়ার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের পরজীবী। আর এ রোগ মানুষের শরীরের পৌঁছায় স্ত্রী-অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে। আরটিএস,এস টিকা শিশুদের শরীরে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। যে পাঁচটি প্রজাতির প্লাজমোডিয়ামের কারণে ম্যালেরিয়া হয, তারমধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম সবচেয়ে প্রাণঘাতী এবং আফ্রিকায় এর প্রকোপই সবচেয়ে বেশি। বিবিসি জানিয়েছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের তৈরি এই টিকা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে ছয় বছর আগে। এরপর ঘানা, কেনিয়া ও মালাউয়িতে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগেও সফলতা আসে। ডব্লিউএইচও বলেছে, সাব-সাহারা আফ্রিকার মতো যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়ার মাঝারি থেকে উচ্চ প্রকোপ দেখা যায়, সেখানে এই টিকা প্রয়োগ করা উচিত। বিশ্ব সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকার প্রতীক্ষা বহু দিনের। বিজ্ঞান, শিশু স্বাস্থ্য ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এটা যুগান্তকারী ঘটনা। এই টিকা প্রতিবছর লাখো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। ২০১৫ সালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা যায়, এ টিকা প্রতি ১০ জনেরমধ্যে ৪ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। আক্রান্ত হলেও প্রতি দশজনে তিনজনের গুরুতর অসুস্থ হওয়া রোধ করে। আর আক্রান্ত হলে শিশুদের দেহে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তা এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনে। তবে কার্যকর সুরক্ষা পেতে এ টিকার চারটি ডোজ নিতে হয়। শিশুর বয়স পাঁচ মাস হলে এক মাস অন্তর প্রথম তিনটি ডোজ দিতে হয়। আর চতুর্থ বুস্টার ডোজটি দিতে হবে ১৮ মাস বয়স হলে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এ টিকা দেওয়া হয়েছে ২৩ লাখ শিশুকে। তাতে দেখা গেছে, এ টিকা নিরাপদ এবং ম্যালেরিয়ার মারাত্মক সংক্রমণ ৩০ শতাংশ কমাতে সক্ষম। যেসব শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশির ক্ষেত্রে ঘুমানোর সময় মশারি টানানোর ব্যবস্থা ছিলো না। রুটিন অন্যান্য টিকার ওপর এ টিকার কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে নি। আর এই টিকা সশ্রয়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ম্যালেরিয়া কর্মসূচির পরিচালক ড. পেদ্রো আলোন্সো বলেছেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ টিকার উদ্ভাবন যুগান্তকারী ঘটনা, আর জনস্বাস্থ্যগত দিক থেকে এ এক ঐতিহাসিক কীর্তি। ‘আমরা শত শত বছর ধরে ম্যালেরিয়ার টিকার অপেক্ষায় ছিলাম। এ টিকা জীবন বাঁচাবে এবং আফ্রিকার শিশুদের রোগ প্রতিরোধ করবে।’ ম্যালেরিয়া রোধে অন্যসব পন্থার পাশাপাশি টিকা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এই রোগে মানুষের মৃত্যু শূন্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা চলবে। আফ্রিকায় আছে নানা ধরনের ম্যালেরিয়া। আর সেখানে ম্যালেরিয়ার বিস্তারও বেশি হওয়ায় মূলত আফ্রিকাতেই দেওয়া হবে এই টিকা। ম্যালেরিয়া টিকা উদ্ভাবন কেন্দ্র ‘পাথ’ এর প্রধান অ্যাশলে বলেছেন, ‘টিকা দেওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা। বহু পরিবারেরই ভয় কেটে যাবে এতে।’