মুক্তিযোদ্ধার কলাম : আমি স্বাধীনতা ঘোষণার ওয়্যারলেস বার্তার কপি দেখেছি
দেবেশ চন্দ্র সান্যাল :: ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিলো উত্তাল। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড, জ্বালাও-পোড়াও এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী কাজ করেছে। ২৬ মার্চ সকাল ৭টার দিকে আমার গ্রামে আমি, নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম সরকার ও অন্যান্য কয়েকজন ঘটনা জানার জন্য শাহজাদপুর থানার স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান স্যারের বাড়িতে গেলাম। তাঁর বাড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীতে ভরপুর। সকাল ৯টার দিকে শাহজাদপুর থানার ওসি আব্দুল হামিদ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তার কপি নিয়ে এমপিএ স্যারের বাসায় এলেন। তখন এমপিএ স্যারের পিতা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বাড়ির সামনে পায়চারি করছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাসা থেকে এমপিএ স্যারের ভাই আব্দুল গফুর সরবত স্বাধীনতা ঘোষণার ওয়্যারলেসের একটি কপি হাতে নিয়ে বাড়ির গেটে এসে হাত উঁচু করে এটি সবাইকে দেখালেন। তিনি ওয়ালেস টেলিগ্রামের কপিতে লেখা সকলের সম্মুখে পড়লেন। তিনি বললেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (২৫ মার্চ দিবাগত রাতে) ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।
তিনি শেষ বাণী প্রদান করেছেন এবং সাবাইকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই টেলিগ্রাম বার্তাটিতে যা লেখা ছিল তা হলো :
‘From Dacca
To pleople’s of Bangladesh and all of the world.
Pakistan arms forces suddenly attacked E.P.R of Peelkhana and police forces at Rajarbag from 00 hours of 26th March killing lakhs of unarmed people[.] Fierce battle going on with EPR and police forced in the street of Dacca and people are fighting gallantly for the freedom of Bangladesh. Every section of people of Bangladesh asked-attack enemy force at any cost of Bangladesh. May Allah bless you and help in your struggle of freedom.
Joy Bangla
Sk.Mujib.’
তারপর এমপিএ স্যার জাতির পিতার স্বাধীনতা ঘোষণার কথা শাহজাদপুরের সর্বত্র জানানোর জন্য শাহজাদপুর সদর ও অন্যান্য স্থানে প্রচারের জন্য কয়েকটি মাইক পাঠালেন। পরে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) স্যার ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বললেন, আপনারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হন। জাতির পিতা যার কাছে যা আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।
ঠিকানা : বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল, পিতা : দ্বিজেন্দ্র নাথ সান্যাল, মাতা : নিলীমা রানী সান্যাল, গ্রাম ও ডাকঘর : রতন কান্দি, ইউনিয়ন : হাবিবুল্লাহনগর, উপজেলা : শাহজাদপুর, জেলা : সিরাজগঞ্জ। গেজেট নং-বে-সামরিক সিরাজগঞ্জ- ১৬৭৯। ভারতীয় প্রশিক্ষণ- এফএফ নং- ৪৭৪২। সমন্বিত তালিকা জেলাভিত্তিক- ১৬১১, উপজেলা ভিত্তিক- ১৫১, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম নং- ০১৮৮০০০১৪১১।
(লেখাটি পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে)