পঁচাত্তরে অনেকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

পঁচাত্তরে অনেকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
ডন প্রতিবেদন : পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ, দলীয় সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনাবাহিনীর যথাযথ ভূমিকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি সেই দিনের ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেইদিন বাংলাদেশে এটা ঠিক যে, এই রকম একটা ঘটনার পর আমাদের দল, সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধাদের যে ভূমিকা ছিলো তা হয়তো তারা করতে পারে নি।’ ‘কিন্তু এটা আপনারা জানেন যে, যখনই আক্রমণ শুরু হয় প্রথমে যেমন সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় বা শেখ মনির বাসায়, খবরটা আসার সাথে সাথে এবং আমাদের বাসায় যখন গুলি শুরু হয় বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা হয়, তোফায়েল আহমেদের সাথে কথা হয়, সেনা প্রধান শফিউল্লাহর সাথে কথা হয়…সেনাবাহিনীরও, যার যা ভূমিকা ছিল তারাও কিন্তু সঠিকভাবে করে নাই। এর পেছনে রহস্যটা কী সেটাই কথা।’ বাংলাদেশের স্বাধিনতার ৪ বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাঁর দুই মেয়ে শেখ হসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। দুই যুগ পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। সেই বিচারের রায় এবং দণ্ডিত অধিকাংশের দণ্ড কার্যকর হলেও হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিলো বলে বরাবরই বলা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে মহামারি শেষেই একটি কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। জাতির পিতাকে হত্যার পর ৬ বছর নির্বাসনে থেকে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরেন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বেই এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আলোচনা সভায় আবোপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা, মা, ভাই-বোন সব হারিয়ে যেদিন বাংলার মাটিতে পা দিলাম, আমাকেও তো আসতে অনেক বাধা দিয়েছে। তারপরও জোর করে যখন আসলাম, হ্যাঁ, আমি সেই চেনামুখগুলো পাই নি। বরং দেশে এসে আমি কবর পেলাম। তখন আমি পেয়েছি লাখো মানুষ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মি। তাঁদের ভালোবাসা, তাঁদের আস্থা, বিশ্বাস।’ ‘এজন্য আমি বলতে পারি আওয়ামী লীগ আমার পরিবার। বাংলাদেশটাই আমার পরিবার। আমি সেইভাবেই বাংলাদেশের মানুষকে দেখি। আমি যেটুকু কাজ করতে পারবো মনে হয় আমার আব্বা, আম্মা তাঁরা দেখবে, নিশ্চয়ই দেখবে, দেখেন। হয়তো তাঁদের আত্মাটা শান্তি পাবে। আমি সেই চিন্তা করেই সব কাজ করি।’ ‘এজন্য আমার কোনও মৃত্যুভয়ও নেই, কোনও আকাঙ্ক্ষাও নেই, কোনও চাওয়া পাওয়ারও কিছু নেই। আমার জন্য আমি কিছু করবো? করতেও চাই না।’ বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকুই চাই, যাঁরা ষড়যন্ত্রকারি, চক্রান্তকারি যে উদ্দেশ নিয়ে তারা ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করেছে…তাদেঁর উদ্দেশ তো ছিলো বাংলাদেশ ফেইল্ড রাষ্ট্র (ব্যর্থ রাষ্ট্র) হোক, বাংলাদেশের স্বাধিনতা অর্জনটা ব্যর্থ হোক, স্বাধিনতার আদর্শগুলো ধ্বংস হয়ে যাক… সেটা করতে দেবো না। যে নাম তারা মুছে ফেলেছিলো, আজকে আল্লাহর রহমতে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বিকৃত। এখন আর কেউ তা মুছতে পারবে না।’ আদর্শ নিয়ে যদি একটা সংগঠন করা যায়, তাহলে সেই সংগঠনই মানুষকে কিছু দিতে পারে উল্লেখ করে নেতাকর্মিদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকে করোনার সময়ে কারা মানুষের পাশে আছে? আর কত দল শুধু বিবৃতি, বক্তৃতাই দিয়ে যাচ্ছে। কারণ আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, প্রাইভেট টেলিভিশন করে দিয়েছি, প্রাইভেট রেডিও করে দিয়েছি। একটা অবাধ সুযোগ আছে সবার কথা বলার। কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু মাঠে কয়টা মানুষ আছে? মানুষের পাশে কে আছে? দুঃসময়ে কে দাঁড়াচ্ছে? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরাই দাঁড়াচ্ছে।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে এই সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবিরসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।