নড়াইলে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় আরেকজন গ্রেপ্তার।
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (৩ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার নূর-নবী (৩৭) নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের মৃত ফয়েজ চৌকিদারের ছেলে। সে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায়। গতকাল রাতেই তাকে সদর থানায় নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন নূর-নবী খুবই বেপরোয়া ছিলো। তাকে সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছিলো। এ নিয়ে ওই ঘটনায় ৫ জন গ্রেপ্তার হলো। এর আগে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো : নড়াইল সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম ওরফে রুবেল (২৭), ব্যবসায়ী মো. শাওন খান (২৮) ও ইজিবাইকচালক সৈয়দ রিমন আলী (২২) এবং খুলনার সরকারি বিএল কলেজে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র রহমতুল্লাহ বিশ্বাস (২৪)। তাঁদের মধ্যে প্রথম ৩ জনের বাড়ি সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। আর রহমতুল্লাহের বাড়ি রুখালি গ্রামে।
পুলিশ আরও জানায়, আগে গ্রেপ্তার হওয়া ওই ৪ আসামির প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার (৪ জুলাই) তাঁদের রিমান্ড শুরু হবে। ওই ঘটনায় ২৭ জুন পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৭০ থেকে ১৮০ জনের নামে মামলা করে।
রোববার রাতে নূর-নবীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহামুদুর রহমান আজ সকালে বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, তাকে কিছুক্ষণের মধ্যে আদালতে নেওয়া হবে।
গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজ শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শনিবার (২ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার দিকে জেলা প্রশাসকের নিকট ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী।