নতুন মুদ্রানীতিতে সুদহারের সীমা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নতুন মুদ্রানীতিতে সুদহারের সীমা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধ (জুলাই-ডিসেম্বর) বা বছরের শেষার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বহুল আলোচিত ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহারের সঙ্গে ৩ শতাংশ সুদ যোগ করতে পারবে ব্যাংক। ফলে সুদহার দাঁড়াবে ১০ শতাংশের মতো। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার রোববার (১৮ জুন) বেলা ৩টার দিকে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন মুদ্রানীতিতে বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। রেপোর সুদ ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ করা হয়েছে। রিভার্স রেপোর সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ২০২০ সালে ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা আরোপ করা হয়েছিলো। এখন তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মুডিসের রেটিং কমানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে আমাদের ঋণমান কমিয়েছে মুডিস। ২০১২ সালে প্রথম তাঁরা যখন রেটিং দিয়েছিলো, তখন দেশের রিজার্ভ ছিলো অনেক কম। আমদানি, রপ্তানিসহ অর্থনীতির আকার এতো বড় ছিলো না। সে তুলনায় এখনকার অবস্থা অনেক ভালো, অথচ মান কমিয়ে দিলো। সুতরাং বিদেশি বিনিয়োগে এই রেটিংয়ের কোনও প্রভাব পড়বে না।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের নতুন সুদহার :
নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্যাংকঋণের ৯ শতাংশ সীমা তুলে দিয়ে সুদ গণনার নতুন কাঠামো ঘোষণার সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহারের সীমাও তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন নিয়মে ব্যাংকঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। এসএমই ও ভোক্তাঋণের তদারকি খরচের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ১ শতাংশ বেশি সুদ আরোপ করতে পারবে।

রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এ তথ্য জানান।

আর প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান সুদ গণনার নতুন কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত বলেন। তিনি জানান, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় হারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ শতাংশ সুদ যুক্ত (যোগ) করতে পারবে। এটাই হবে সুদের সর্বোচ্চ হার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে গড় সুদ ছিলো ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। সে হিসাবেই ব্যাংকঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১২ শতাংশ।

এসএমই ও ভোক্তাঋণের তদারকি খরচের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ১ শতাংশ বেশি সুদ আরোপ করতে পারবে বলে জানান হাবিবুর রহমান।

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, যখন ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা দেওয়া হয়েছিলো, তখন ব্যাংকগুলোর সুদ ১৮ শতাংশে উঠেছিলো। তখন বিদেশি ঋণের সুদহার ছিলো ২ শতাংশ। এখন বিদেশি ঋণের সুদ ৯ থেকে ১০ শতাংশ। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তার খরচ আরও বেশি হয়ে যাচ্ছে।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে বলেই জানান গভর্নর।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্য পূরণের জন্যই নতুন মুদ্রানীতিতে নানা ধরনের সঙ্কোচনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।