দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা’র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা’র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।
ডন প্রতিবেদক, পায়রা : পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কেন্দ্র ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি ‘হাব’ গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সোমবার (২১ মার্চ) পায়রায় কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পাশাপাশি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। কোভিড মহামারী শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে দেশের অন্য কোথাও এটিই তাঁর প্রথম সফর। কলাপাড়ায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ সদস্যরা গার্ড অব অনার দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোল জেটিতে যান। পায়রায় পৌঁছানোর পর রাবনাবাদ নদীর কয়লা জেটিতে রঙিন পাল তোলা ২০০ নৌকা থেকে পতাকা উড়িয়ে এবং গানের সুরে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন এবং মঞ্চে এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নাম ফলক উন্মোচন করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতার স্মারক হিসেবে ১৩২০টি পায়রা এবং বেলুন ওড়ানো হয় এ সময়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধনের পর সেখানে সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এ সফর ঘিরে পুরো এলাকা সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। পায়রা নদীর তীরে এক হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন ক্ষমতার দিক দিয়ে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। কর্মকর্তারা বলছেন, এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ত্রয়োদশ এবং এশিয়ায় সপ্তম দেশ। দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোতে চীন ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহার করে না। ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহারের ফলে বাতাসের মাধ্যমে খোলা কয়লা থেকে কয়লার গুঁড়ো ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগে এ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ২০২০ সালের মে থেকেই কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করে। ওই বছরের শেষ দিকে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয় দ্বিতীয় ইউনিটও। ইতোমধ্যে সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা অনুযায়ী মোট ৫৫০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিলো ৪৭ শতাংশ। গত ১৩ বছরে ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সম্ভাব্য সকল এলাকায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার। একেবারের দুর্গম এলাকাগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিলো ১ কোটি ৮ লাখ। গত ১৩ বছরে ৩ কোটি ১৩ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২১ লাখ। ২০০৯ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে এ ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিলো ২৭টি, বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৫০ টি। ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের বিতরণ লাইন ছিলো ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার, বর্তমানে ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দুর্গম এলাকার মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে ৬০ লাখেরও বেশি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।