ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে শিক্ষার্থীরা

ডন প্রতিবেদন : মহামারির কারণে প্রায় এক বছর অপেক্ষায় থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (পহেলা অক্টোবর) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষারমধ্য দিয়ে এই ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৬০ নম্বরের বহুনির্বাচনী, ৪০ নম্বরের লিখিতসহ মোট ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের ৮ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্র করে এ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন। ‘ক’ ইউনিটের ১ হাজার ৮১৫টি আসনের বিপরীতে এবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থী। এই হিসাবে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের জন্য ভর্তিচ্ছু ছিলেন গড়ে প্রায় ৬৫ জন করে। পরীক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিলো। তাই সকাল থেকেই ভর্তিচ্ছুদের পদাচারণায় মুখর হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস। সকালে শেষ মুহূর্তে পাঠ্যবইয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে দেখা যায় পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাসের ছাপ ছিলো স্পষ্ট। সব বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা হলেও ফরম পূরণের সময় ঢাকাকে কেন্দ্র হিসেবে দেওয়া অনেকে অন্য বিভাগ থেকেও পরীক্ষা দিতে এসেছেন কেউ কেউ। এমনই একজন কুমিল্লার জুরানপুর আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পাস করা মেহের নিগার বিথীর বাবা গিয়াসউদ্দিন জানান, তিনি তাঁর মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। ‘আশা করি, মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।’ ২০২০ সালের এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলে মহামারীকালে সেই পরীক্ষা কয়েক দফা পেছানো হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় পরীক্ষা আর হয় নি। শিক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল গড় করে এইচএসসির মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয় এ বছর জানুয়ারিতে। সব ঠিক থাকলে ২০২০ সালের অক্টোবর-নভেম্বরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে যেতো। কিন্তু মহামারীর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে এক বছর অপেক্ষার পর, ২০২১ সালের অক্টোবরে। ২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিট, ২২ অক্টোবর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিট এবং ২৩ অক্টোবর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগ পরিবর্তনের সমন্বিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যারয়ের ৫টি ইউনিটের ৭ হাজার ১৪৮টি আসনের বিপরীতে মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন এবার। ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ইউনিটের সমন্বয়ক ও জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথমবারের মতো সারাদেশের বিভাগীয় শহরে কেন্দ্র করে পরীক্ষা নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘তাই সব ধরনের বিষয় মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। গতকালই (৩০ সেপ্টেম্বর : বৃহস্পতিবার) আমাদের শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন। বিভাগীয় শহরের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের সহযোগিতা করছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোথাও কোনও প্রশ্ন ফাঁস কিংবা জালিয়াতির সুযোগ নেই। ‘বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে একই প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষাগুলোতেও কোনও ধরনের সমন্বয়হীনতা থাকবে না। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছি। সব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ আমাদের সব ধরনের নিরাপত্তার বিষয়ে সহায়তা করছেন।’