চা-শ্রমিকেরা সবমিলিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকা করে পাবেন : দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা।

চা-শ্রমিকেরা সবমিলিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকা করে পাবেন : দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : চা শ্রমিকেরা এখন থেকে সবমিলিয়ে সাড়ে ৪ শ থেকে ৫ শ টাকা করে পাবেন, আর তাঁদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭০ টাকা। প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে দৈনিক সাড়ে ৪ শ থেকে ৫ শ টাকা করে পাবেন শ্রমিকেরা। আগামীকাল রোববার (২৮ আগস্ট) থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ছাড়া শিগগিরই ভিডিও কনফারেন্সে চা-শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।  

এর আগে আজ শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাগান মালিকদের বৈঠক হয়। সেখানে ১৩ জন মালিক অংশ নেন। 

ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখানে ব্যাখ্যা করা দরকার- চা শিল্পে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়, যেটা মালিকপক্ষ বহন করে। সেই ক্ষেত্রে যেটা আনুপাতিক হারে বেড়ে যাবে, যেমন- নগদ মজুরি ১৭০ টাকা, প্লাকিং বোনাস, কারখানা অধিকার, কাজের আয়- সেটা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি, বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। এগুলো সবগুলোতে টাকা দেওয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বলেন, ‘অসুস্থাজনিত ছুটি, সেটাও বাড়বে আনুপাতিক হারে। ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা, বার্ষিক উৎসব ভাতা সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। ৫ শতাংশ প্রশাসনিক খরচ সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে।’ 

‘এ ছাড়া আরও রয়েছে ভর্তুকি মূল্যে রেশন যেটা দেয়, যেটা ২৮ টাকা দিয়ে কিনে, দুই টাকায় দেয় শ্রমিকদের।’

‘চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ, গরু চরানো, চৌকিদার ব্যয় এবং বিনামূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি এবং বাসাবাড়িতে উৎপাদন বাবদ আয়- এই সবকিছু মিলিয়ে যেটা পড়ে, সেটার হিসাব এখনো তাৎক্ষণিক করতে পারে নি। তবে দেখা যাচ্ছে, সেটা হয়তো সাড়ে ৪ শ থেকে ৫ শ টাকা দৈনিক পড়বে। এটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’ 

‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে কাজে যোগদান করার জন্য। যেহেতু উনি সবার কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি বললে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন।’

কায়কাউস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁদের (শ্রমিকদের) পক্ষ হয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন বলেছিলেন, সেটি উনি করেছেন। আগামীকাল থেকে যেনো সবাই কাজে যোগ দেয়, সেই আহ্বান তিনি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কথা বলেছেন, শিগগিরই তিনি চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব।

সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকেরা ন্যূনতম মজুরি ৩ শ টাকা নির্ধারণের দাবিতে কর্মবিরতি বা ধর্মঘট করে আসছিলেন। গত ৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রম অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনও মীমাংসা হয় নি। এ অবস্থায় আজ চা-বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চা-বাগানের শ্রমিকেরা আগে দৈনিক মজুরি পেতেন ১২০ টাকা। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শ্রম অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের পর দুই দফায় ২৫ টাকা বাড়িয়ে মজুরি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছিলো। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শ্রমিকেরা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হলো।