চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে লিটারে ৫৩ টাকা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে লিটারে ৫৩ টাকা।

বাসস : দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫৩ টাকা কমে গেছে। বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দরপতনের জেরে গত ১৫-২০ দিনে মণে প্রায় ২ হাজার টাকা হ্রাস পেয়েছে পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের শীর্ষ পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

খাতুনগঞ্জের অন্যতম শীর্ষ পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর পারভেজ আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে বাসসকে বলেন, ‘সরকার প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ভোজ্যতেলের দাম কমছে। গত ১৫ থেকে ২০ দিনের ব্যবধানে পাম অয়েল মণে ২ হাজার টাকার মতো কমে গেছে। সয়াবিন তেল কমেছে ১ হাজার টাকার বেশি।’ 

পাইকারি বাজারে প্রতিমণ ৪০ কেজির পরিবর্তে হিসাব করা হয় ৩৭ দশমিক ৩২ কেজি হিসাবে।

তিনি জানান, ‘দরপতনের এ ধারায় তেলের দাম আরও কমবে। নতুন এলসির তেল আসলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে তেলের দাম মণপ্রতি আরও ৫-৬ শ টাকা কমে যাবে। তবে, পাইকারি বাজারের এ দরপতনের প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ে নি। খুচরা ব্যবসায়ীরা এখনো বর্ধিত দামে তেল বিক্রি করছেন। ফলে, তেলের মূল্যহ্রাসের ইতিবাচক প্রভাব সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে নি। এমন অবস্থায় প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।’

এদিকে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাসসকে বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। একমাস আগে প্রতিমণ পাম অয়েল ৬ হাজার ৩ শ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩ শ থেকে ৩৫০ টাকায়। অর্থাৎ পাম অয়েল প্রতিমণে দুই হাজার টাকার মতো কমে গেছে। আমাদের এ মার্কেটে প্রতিটি আমদানি পণ্য সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেচাকেনা হয়। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে যখন বেড়েছিলো, তখন আমাদের এখানেও দাম বেড়ে যায়। আবার দরপতন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, খুচরা বাজারে এখনো বর্ধিত মূল্য বহাল আছে। খুব কম খুচরা ব্যবসায়ী থাকবেন, যাঁরা কোরবানির আগে কেনা তেল এখনো বিক্রি করছেন। কোরবানির পরে যাঁরা তেল তুলেছেন, তাঁরা নিশ্চয় অনেক কম দামে কিনেছেন। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে চড়া দামে বিক্রি করে অযৌক্তিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।’

খুচরা বাজারে আজ অপরাহ্নে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানানোয় তিনি বলেন, ‘এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্যে ভোক্তারা সব সময় ঠকে থাকেন। খুচরা বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদারকি শুরু হলে দেখবেন একদিনের মধ্যেই ভোজ্যতেলের দাম পড়ে গেছে।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যায়, তখন ব্যবসায়ীরা কারো সঙ্গে আলাপ না করেই দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম পড়ে গেলো, তখন তাঁরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে দাম কমান নি। সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে রইলেন। এখন বলছেন, আগের কেনা তেল কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই।

ক্যাবের তথ্যমতে, গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনর্নির্ধারণ করেছিলো। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিলো। এরপর গত ৯ জুন মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১ লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

এ ছাড়া ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১ লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা পর্যায়ে ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটার প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ মাসের ব্যবধানে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ২ শ থেকে ৪৯০ ডলার। অথচ ব্যবসায়ীরা ১ মাসে ২ দফায় প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিলো টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিলো ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিলো ১ হাজার ৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে এক পর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১ হাজার ৯৫৬ ডলার। বিশ্বব্যাংকের ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, গতকাল (১৮ জুলাই) সয়াবিন তেলের দাম কমে হয়েছে ১ হাজার ৩২৪ ডলার ৫৪ সেন্ট। সে হিসেবে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ সয়াবিন তেলের দাম ৩ ভাগের ১ ভাগ কমে গেছে। একইদিনে পাম অয়েলের দাম কমে প্রতিটন বিক্রি হয়েছে ৮৬৬ ডলার ৭৫ সেন্ট। সে হিসেবে পাম তেলের দাম কমেছে সাড়ে ৪৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে পাম অয়েলের দাম প্রায় অর্ধেকই কমে গেছে।