খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীদের 'মার্চ ফর আইডেন্টিটি' কর্মসূচি পালন

খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীদের 'মার্চ ফর আইডেন্টিটি' কর্মসূচি পালন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; এস চাঙমা সত্যজিৎ, খাগড়াছড়ি : পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, রাষ্ট্র সংস্কারে ‘আদিবাসীদের’ মূল্যায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, স্ব-স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতিসহ ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং ৮ দফা দাবিতে খাগড়াছড়িতে 'মার্চ ফর আইডেন্টিটি' কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীরা এসে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হন। এরপর ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগানে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠ থেকে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।

মিছিল নিয়ে তাঁরা খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, শাপলা চত্বর, আদালত সড়ক ঘুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর তাঁরা আবার মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে এসে সমাবেশ করেন।

সমাবেশে ফুটন্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রিপুল চাকমা, ক্যসিং মারমা, প্রণয় চাকমা, কৃপায়ন ত্রিপুরা এবং মংসাই মারমা।

ফুটন্ত চাকমা বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিলো না। দিনে-দুপুরে মানুষ খুন হতো।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিপূর্বক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং জেলা পরিষদের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে জেলা পরিষদের নির্বাচন দিতে হবে।

আরেক শিক্ষার্থী ক্যসিং মারমা বলেন, মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়তে ক্রীড়াকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। তিন পার্বত্য জেলার ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাহাড়িদের মধ্য থেকে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

কৃপায়ন ত্রিপুরা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সরকারি বা বেসরকারি কোনও কর্মকর্তা/কর্মচারীর 'পানিশমেন্ট জোন' হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

চাকরির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয়দের পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

বক্তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, এই সরকার যদি পূর্ববর্তী সরকারের মতো কথিত ‘উন্নয়ন’ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন করতে চায় তাহলে বড় ধরনের ভুল করবে।

তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্য উল্লেখ করে রাজনৈতিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান করা এবং বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এ ছাড়া তারা ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বহাল রাখা, ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহালসহ তাঁদের পূর্বে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন।

এ সময় বক্তারা স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত মনগড়াভাবে জেলা পরিষদগুলোতে চেয়ারম্যান, সদস্য নিয়োগ দেওয়া হলে ‘জেলা পরিষদ ঘেরাও’ করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।