এমডির জালিয়াতি ও অদক্ষতায় রূপালীর আর্থিক সূচকে অবনতি!

এমডির জালিয়াতি ও অদক্ষতায় রূপালীর আর্থিক সূচকে অবনতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; রাহাতুল রাফি : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক খাতের রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পায় নি। অধিকহারে জালিয়াতি মূলত এম ফরিদ উদ্দিনের কিছু সময় আগে শুরু হলেও ব্যাংকটি বেশি খারাপ অবস্থায় পতিত হয়েছে সেই ফরিদের আমলেই। এরপর আরও দুজন এমডি ব্যাংকে এসেছেন, তবে তাঁরাও সেই চিতায়ই গেছেন। সর্বশেষ প্রায় দেড় বছর আগে রূপালী ব্যাংকে এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে প্রথমে ফ্রেশ মনে হলেও এখন তিনিও চলে গেছেন সেই জালিয়াতদের দলে। সার্বিকভাবে রূপালী ব্যাংকে দায়িত্ব নেওয়ার পর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের আমলে ব্যাংকটি আর্থিক সূচকে দিন দিন খারাপ করছে। বিষয়টিকে তাঁর অদক্ষতা এবং জালিয়াতির কারণ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এতে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয় নি।

অনিয়ম করার পরও থার্মেক্স গ্রুপকে বৃহৎ গ্রাহকের তালিকায়ই রাখে নি রূপালী ব্যাংক! :
রূপালী ব্যাংকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ব্যাংকটির রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বা মূলধন ছিলো ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। বিধিমতে, কোনও একক গ্রাহক বা গ্রুপকে ৫৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই তাঁদের। অথচ থার্মেক্স নামে একটি গ্রুপের মোট ঋণ রূপালী ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশও অতিক্রম করেছে। সার্বিকভাবে গ্রুপটি রূপালী ব্যাংকের একটি বৃহৎ গ্রাহক। অথচ গত বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বৃহৎ গ্রাহকের তালিকায় নামই নেই থার্মেক্স গ্রুপের। কিন্তু ৩৬৬ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া গ্রাহক নোমান স্পিনিং মিলসের নাম বৃহৎ গ্রাহকের তালিকায় ছিলো রূপালী ব্যাংকের। বিষয়টিকে তথ্য গোপন হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, রূপালী ব্যাংক থেকে থার্মেক্স গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার আশপাশে ছিলো। কিন্তু নতুন করে ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ (৬৬ কোটি ২৭ লাখ এবং ১৭ কোটি ৫২ লাখ) টাকা যুক্ত হয়ে ঋণের সমষ্টি একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছে; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী অনিয়ম।

সেপ্টেম্বর শেষে ৩ মাসেই রূপালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা :
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেলো জুন প্রান্তিক শেষে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; অথচ তা ৩ মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৬৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে অধিকহারে জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।