ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা। বিজিবি সদস্যসহ নিহত ৯।

ডন প্রতিবেদন : এ বারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ধাপে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) ভোটের দিন সহিংসতায় বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। নির্বাচন চলাকালে অন্তত ১৩০টি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় এমন লোকজন আহত হয়েছেন। এক্ষেত্রে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ, জালভোট, কেন্দ্র দখল এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া কেন্দ্রে গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পিটিয়ে বিজিবির নায়েক রুবেল হোসেনকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের ঘোষিত ফল প্রত্যাখ্যান করে লাঙল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মারুফ হোসেনের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালান। আত্মরক্ষার্থে বিজিবি সদস্য রুবেল কেন্দ্রের একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ সময় পুলিশের গাড়ি ও ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালান তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড গুলি চালান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ললিত চন্দ্র রায় বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, হামলায় তিনি নিজে, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কয়েকজন পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বাংলাবাজারে পৃথক সহিংসতার ঘটনায় শাকিল মোল্লা (৩০) ও রিয়াজুল শেখ (৬০) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। নরসিংদীতে পৃথক ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুইজন। রায়পুরার চান্দেরকান্দিতে ভোট গণনা শেষে সংঘর্ষে আরিফ (২৮) নামের এক অটোরিকশাচালক নিহত হন। উত্তরবাখরনগর ইউনিয়নে পৃথক সংঘর্ষে আহত ফরিদ মিয়া (৩২) নামের আরেকজন ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। এক্ষেত্রে ভোটের সময় বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ৫০ জন আহত হন। সদর উপজেলার করিমপুর, নজরপুর এবং চিনিশপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুল বাকী বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, হাসপাতালে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ ২৫ জনসহ ৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে সাহাবলি হুসেন (৩৫) এবং মজাহারুল (৪০) নামের ২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬ জন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র এলাকায় সহিংসতায় আহত হন ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সজিব। বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে চাঁদপুরে অ্যাম্বুলেন্সেরমধ্যেই মারা যান তিনি। এর আগের রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ভাদুর ইউনিয়ন থেকে পুলিশ স্থানীয় পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সিদ্দিকী জীবনসহ ৩১ জনকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করে। বিষয়টি বাংলা কাগজ এবং ডনকে নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান। ভোট শুরুর আগে খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক বাবুল শিকদারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে ভোটের প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা তাঁকে হাতুড়িপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে রবিবার (২৮ নভেম্বর) ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। ব্যালট ছনিতাই ও কেন্দ্র দখল : মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী নাহিদ আহমেদ বাবলুর সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ছিনিয়ে ১৩৪টি ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, যশোরের শার্শা, মেহেরপুর সদর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। কুমিল্লার বরুড়ার ঝলম ইউনিয়নের ঢেউয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত ও কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় পুলিশ কর্মকর্তার পিস্তলও ছিনিয়ে নেন দুর্বৃত্তরা। পরে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।